বেপজাকে অন্য বিনিয়োগ সংস্থার সাথে একীভূতকরণের বিপক্ষে বিনিয়োগকারীরা

বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে একীভূত করে একটি কেন্দ্রীয় 'ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সি (আইপিএ)' গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এই উদ্যোগ ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) বিনিয়োগকারীরা। তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বেপজা আমাদের খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। যেহেতু এটি ভালোভাবে কাজ করছে, তাই একে আলাদাই রাখা উচিত। অন্য যে আইপিএগুলো রয়েছে, সেগুলো চাইলে বিডার আওতায় আনা যেতে পারে।"
তিনি বলেন, "বেপজা প্রায় ৪৫ বছর ধরে কাজ করছে। অন্য সংস্থা থাকা সত্ত্বেও আমরা এখান থেকেই শিল্প প্লট নিতে চাই, কারণ এখানকার সেবা মানসম্পন্ন। তাদের একটি দক্ষ ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছি। তাহলে কেন তাদেরকে অন্যদের সঙ্গে একীভূত করা হবে?"
তিনি আরও বলেন, "সব আইপিএ-কে এক ছাদের নিচে এনে অনলাইনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যারা ভালো সেবা দিতে পারছে না, কেবল তাদেরকেই একীভূত করা হোক।"
"বেপজা তো আগে থেকেই ভালো করছে। এখন একীভূত করা হলে নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে। নতুন কর্মকর্তা আসতে পারেন, পুরোনোরা বদল হতে পারেন, এবং জিএম-এর মতো পজিশন নাও থাকতে পারে—এসব কারণে বেপজাকে আলাদা রাখা উচিত," যোগ করেন তিনি।
উত্তরা ইপিজেডের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী এবং এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি বিডির চেয়ারম্যান চ্যাং ইয়ো চোং ফেলিক্সও একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত এগোচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও আলোচনার প্রয়োজন।"
তিনি জানান, এ বিষয়ে ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূতকেও তিনি তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
সরকার বর্তমানে বিডা, বেপজা, বেজা, বিএসসিআইসি, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষসহ একাধিক বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠনের কাজ করছে, যাতে বিনিয়োগকারীদেরকে সহজ ও সমন্বিত সেবা দেওয়া যায়।
এই প্রস্তাবটি গত ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিডার তৃতীয় গভর্নিং বোর্ড বৈঠকে আলোচিত হয়।
প্রস্তাবটি যাচাইয়ের জন্য গত ৩০ এপ্রিল শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
জানা গেছে, এই কমিটি বিষয়টি সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করে মতামত দেবে।
এদিকে, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে বিডা ও বেজার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, "আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বোত্তম সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, একটি কার্যকর ও আস্থাশীল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।"
বর্তমানে দেশে আটটি সক্রিয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বেপজা রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কুইন সাউথ টেক্সটাইলের চিঠি
চীনভিত্তিক কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওং জামি কোয়ক চ্যান গত ২৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে বেপজা একীভূতকরণের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, 'বাংলাদেশে প্রায় তিন দশক ধরে বেপজার আওতায় বিনিয়োগ করছি। এর মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পেরেছি, কারণ বেপজার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আমাদের সহায়তা করেছে।'
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি বেপজার সঙ্গে ৩০ বছরের লিজ চুক্তি করেছে, যার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। তাই কাঠামোগত কোনো পরিবর্তনের আগে বিনিয়োগকারীদেরকে যথাযথভাবে জানানো এবং তাদের মতামত নেওয়া জরুরি বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন।