কুড়িলে ট্রেনের ছবি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীর

রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে ট্রেনের ছবি তুলতে গিয়ে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ। শুক্রবার (২ মে) বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে সামনের দিক থেকে আসা একটি ট্রেনের ছবি তুলছিলেন রাফিদ। এ সময় পিছন দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
নিহতের খালাতো ভাই মুস্তাফিজুর রহমান জানান, রাফিদ তাকে ট্রেনের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছিলেন। তবে পেছন থেকে ট্রেন আসতে দেখে তিনি চিৎকার করলেও তা শুনতে পাননি রাফিদ।
একই স্থানে ছবি তুলতে যাওয়া নারী আলোকচিত্রী ফারহানা আক্তার বলেন, "দূর থেকে দেখে মনে হয়েছিল উনি ইসতিয়াক ভাই। ছবি তুলে ইনবক্সে পাঠিয়েছিলাম, নিশ্চিত হতে। তখনো বুঝতে পারিনি, কী ভয়াবহ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত পরেই রেললাইনে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি।"
তিনি আরও জানান, রাফিদ ট্রেনের সামনের দিকের ছবি তুলছিলেন। কিন্তু পেছন দিক থেকে আসা ট্রেনের শব্দ তিনি শুনতে পাননি। আশপাশের মানুষ চিৎকার করলেও কোলাহলে তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি।

ইসতিয়াকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আজগবি গ্রামে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
তার বন্ধুবন্ধবরা জানান, শখের বসে ২০২০ সাল থেকে মোবাইলে ছবি তোলা শুরু করেন ইসতিয়াক। পরে ২০২২ সালে কেনেন নিজস্ব ক্যামেরা। স্ট্রিট ফটোগ্রাফি ছিল তার সবচেয়ে পছন্দের ধরন। মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রকৃতির সঙ্গে তার গভীর সংযোগ ফুটে উঠত তার ছবিগুলোতে।
২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর 'আমার চোখে পথশিশু' বিভাগে জুম বাংলাদেশ আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেন তিনি।
ইসতিয়াক শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে।
তার বাবা রেজাউল করিম একজন সরকারি কর্মকর্তা (যুব উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত)। ইসতিয়াক ছিলেন পরিবারের একমাত্র ছেলে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার একটি ছোট বোন রয়েছে।
ইসতিয়াকের মৃত্যুতে বন্ধু, সহপাঠী এবং ফটোগ্রাফি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই তাকে স্মরণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন।