উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেবে সরকার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে প্রথমবারের মতো সরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সরকার।
শুক্রবার (২ মে) রাজধানীর গুলশান-২ এর সিক্স সিজনস হোটেলে অনুষ্ঠিত 'দ্য রোল অব গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টস ইন হসপিটাল হেলথকেয়ার অ্যান্ড রিক্রুটমেন্ট ইন পাবলিক হসপিটালস'- শীর্ষক স্টেকহোল্ডার সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নেই, তবে আমরা ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। তাদের উপস্থিতি স্বাস্থ্যসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান।

ওষুধের নিরাপদ ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ফার্মাসিস্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, 'রোগীরা প্রায়ই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ গ্রহণ করেন, যা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ফার্মাসিস্টরা সঠিক ওষুধ ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।'
তিনি আরও বলেন, ''একজন স্নাতক ফার্মাসিস্টই একটি ওষুধের দোকানকে প্রকৃত অর্থে 'ফার্মেসি'তে পরিণত করে।"
সভায় জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ৬৫৪টি সরকারি হাসপাতালে ৫১ হাজারেরও বেশি বেড রয়েছে, কিন্তু কোথাও একজন স্নাতক ফার্মাসিস্টও নিয়োজিত নেই। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই অভাব রোগীদের সেবার মানকে প্রভাবিত করছে, যদিও দেশে ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট এবং নার্সদের সমন্বিত মডেল অপরিহার্য।

ফার্মেসি কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মাহমুদ হাসান জাতীয় ঔষধ নীতি ২০১৬ এর ৪.৩ ধারা উল্লেখ করেছেন। ওই ধারা অনুসারে ইনপেশেন্ট ও আউটপেশেন্ট উভয় সেবায় স্নাতক ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কথা বলা হলেও, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি আন্তর্জাতিকভাবে তুলনা করে দেখিয়েছেন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর ফার্মাসিস্ট-জনসংখ্যা অনুপাত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো।
সভায় প্রতি ৫০টি ইনপেশেন্ট বেডে একজন এবং প্রতিটি আউটপেশেন্ট বিভাগে অন্তত একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে হাসপাতাল ফার্মেসিতে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট থেকে শুরু করে চিফ ফার্মাসিস্ট পর্যন্ত একটি কাঠামোগত পদোন্নতির পথ প্রস্তাব করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের হাসপাতাল ফার্মেসি কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নাসের শহরিয়ার জাহেদি।
তিনি বলেন, 'আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট ছাড়া মানসম্পন্ন সেবা সম্ভব নয়। দেশে ওষুধ সংরক্ষণ ও বিতরণে স্নাতক ফার্মাসিস্টদের তদারকি নেই, যা পরিবর্তন জরুরি।'
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তাইওয়ান সোসাইটি অব হেলথ সিস্টেম ফার্মাসিস্টস-এর সভাপতি ড. ইউ লি চ্যাং এবং মো. নাসরুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে স্বীকৃত ফার্মেসি প্রতিষ্ঠানের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের হসপিটাল ফার্মেসি কমিটির সদস্য এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্টরা উপস্থিত ছিলেন।