আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরে লিচুর বাম্পার ফলনের আশা

দিনাজপুরে আসন্ন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার কারণে লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
বর্তমানে লিচু চাষীরা গুটি লিচুর যত্ন নিচ্ছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে এ জেলার লাল-গোলাপি রঙের টসটসে লিচু।
কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের মতে, এবার দিনাজপুরের লিচু বিক্রির বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।
এদিকে, দিনাজপুরে লিচুর আশাজাগানিয়া সম্ভাবনা দেখা দিলেও পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঈশ্বরদীতে প্রায় ৩০ শতাংশ কম লিচু উৎপাদন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা চাষীদের চরম ক্ষতির মুখে ফেলবে।
দিনাজপুর: ভালো লিচু উৎপাদনের জন্য পরিচিত
দিনাজপুর জেলা লিচু ও চালের জন্য দেশজুড়ে পরিচিত। এখানে উৎপাদিত লিচু স্বাদে ও মানে অনন্য। মাদ্রাজি, বেদানা, হাড়িয়া বেদানা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, কাঁঠালি ও মোজাফফরি জাতের লিচু চাষ হয় এ জেলায়।
সদর উপজেলার মাসিমপুর, ঘুঘুডাঙ্গা, উলিপুর; বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর ও বটহাট; রানীগঞ্জ, খানসামার গোলাপগঞ্জ ও কাচিনিয়া; বীরগঞ্জের সনকা এবং চিরিরবন্দরের কারেন্টহাট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে লিচু চাষ হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এলাকার বেলে-দোঁআশ মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর তুলনামূলক শীতল আবহাওয়ায় লিচুর উৎপাদন ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৫ হাজার ৪৮৪ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৯৮টি লিচুবাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৭ টন।

দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুরের চাষী শাহজাহান আলম জানান, ৫০ শতক জমিতে ৫০টি বেদানা জাতের লিচুর চাষ করছেন। গত বছর ৪০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। এবার সব গাছে ভালো লিচু এসেছে এবং গুটিগুলো আকারেও বড়। পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে, তবে তা এবার আগের তুলনায় কম।
সদরের আরেক চাষী হাসান আলী বলেন, "সম্প্রতি দিনাজপুরে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা লিচুর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। গত বছরের তীব্র তাপদাহের বিপরীতে এবার পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় চাষীরা স্বস্তিতে আছেন।"
দিনাজপুরের বিভিন্ন বাজারে মুকুল আসার পর থেকেই বিভিন্ন ধাপে লিচুবাগান বিক্রি শুরু হয়। বাগান বিক্রি ঘিরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞও হয়। চাষীরা জানান, এ বছর মাদ্রাজি জাতের লিচুর দাম হাজারে ২ হাজার ২০০ টাকা থাকলেও বেশি উৎপাদনের কারণে লাভ হবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, "লিচুর গুটি আসার পর সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত ফলনের জন্য ইতিবাচক হয়েছে।" তিনি আশা প্রকাশ করেন, দিনাজপুর থেকে এবার অন্তত ৮০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে।

ঈশ্বরদীতে ফলন বিপর্যয়
দিনাজপুরের পর উত্তরাঞ্চলে লিচুর জন্য বিখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী। মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া এলাকাগুলোকে 'লিচু গ্রাম' বলা হয়। তবে এবছর এসব এলাকায় লিচুর ফলন মারাত্মকভাবে কম হয়েছে।
কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবারে লিচুর বাগানে মুকুলের বদলে বেশি পাতা গজিয়েছে। মৌসুমে নতুন পাতা আসলে সাধারণত মুকুল আসে না, ফলে ফলন কমে গেছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ৭৯০ টন। এর মধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত লিচু চাষী আব্দুল জলিল কিতাব (লিচু কিতাব) বলেন, "৪৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন বিপর্যয় আগে কখনও দেখেননি। ভারী বর্ষণের কারণে গাছে বেশি পাতা গজানোয় লিচু ধরেনি।"
চাষী ময়েজ উদ্দিন জানান, ঈশ্বরদীতে বেশিরভাগ পরিবার লিচুর ওপর নির্ভরশীল। ফলন বিপর্যয়ের কারণে চাষীরা এখন সংকটে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, "বর্ষার শেষে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও মৌসুমের শুরুতেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মুকুল কম এসেছে। ফলে এবছর ঈশ্বরদীতে প্রায় ৩০ শতাংশ লিচু উৎপাদন কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।"