দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ও এনসিসি গঠনে একমত জামায়াত: ডা. তাহের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম দিনের বৈঠকে সংবিধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনে একমত হয়েছে দলটি।
তবে উচ্চকক্ষ ও এনসিসির গঠন এবং কার্যক্রম নিয়ে চূড়ান্ত মত দেয়নি দলটি। একইসঙ্গে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় এ প্রস্তাবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত হয়েছে তারা।
এছাড়া দলটি বলছে, সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে একত্ববাদ পুনরায় কার্যকরের সুপারিশও করা হয়েছে।
আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে এসব তথ্য জানান দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
তিনি বলেন, প্রস্তাব করেছি সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য। ১০ জনের একটি সমন্বয় কমিটি এসেছি। বিকাল সোয়া ৫টা পর্যন্ত আলোচনা করেছি। আলোচনা অসমাপ্ত আছে, আবার বসা হবে।
তিনি আরও বলেন, বেশি তাড়াহুড়ো করছি না। উল্লেখযোগ্য সংস্কারের লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছি। কমিশনেরও লক্ষ্য জাতির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে পৌঁছানো। আজ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে নিজেরা প্রস্তাব দিয়েছি, কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। পরে আবার আলোচনা হবে। একমত হয়েছি একই ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না।
ডা. তাহের বলেন, আর্টিকেল ৭০ এর ক্ষেত্রে কিছু সংশোধন সহকারে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি। সংবিধান পরিবর্তন, অর্থ বিল বা বাজেট অনুমোদনের ক্ষেত্রে এবং আস্থা ভোট এই তিনটি বিষয় ছাড়া যেকোনো বিষয়ে একজন সংসদ সদস্য দলের মত ও অবস্থানের বিপরীতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। আরও বিস্তারিত আলোচনা দরকার। এটি গঠনের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে কমিটিতে না রাখতে বলেছি।
আনুপাতিক হার (পিআর) সিস্টেমে নির্বাচনের কথা বলেছেন জানিয়ে ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এটা হলে নির্বাচনে দুর্নীতি, জবরদখল, ভোটবিহীন নির্বাচন ও টাকার খেলা বন্ধ হবে। বিশ্বের ৬০টির মতো দেশে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আজ মূলত সংবিধানের ওপর আলোচনা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে। নারী আসন বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা এখনও হয়নি, কিছু আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বহুত্ববাদকে পুরো বাদ দিতে বলেছি। প্রস্তাব করেছি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য।
এর আগে, দুপুরে আলোচনার বিরতিতে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, 'ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা মনে করছি, এটি যৌক্তিক হবে না।'
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী একমত হয়েছে বলে জানান সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি জানান, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের রূপ, কাঠামো ও নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শেষে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
সংবিধান সংস্কার, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে জামায়াতে ইসলামী।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
অন্যদিকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মুনির প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতে সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এটা বাংলাদেশের গণমানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফলাফল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার উদ্দেশ্য থাকবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।