সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু

অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্ব সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শুরু করেছেন উচ্চ আদালত।
বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (২৩ এপ্রিল) এই শুনানি শুরু করেন। রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
আইনজীবীরা জানান, রিট আবেদনের মাধ্যমে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
শুনানিতে শিশির মনির বলেন, '১১৬ অনুচ্ছেদ অতীতে অনেক নেতিবাচক অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে। এমনও হয়েছে, "উপরের নির্দেশ" বলে রাতেই আদালত বসিয়ে একদিনে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে নিম্ন আদালতে প্রায় ২ হাজার ১৯৩ অথবা ২ হাজার ১৮৩ জন বিচারক রয়েছেন। ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হলে বহু মামলা নিম্ন আদালতেই নিষ্পত্তি হবে, হাইকোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।'
শিশির মনির জানান, 'আগে দেখা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের তদবির না শুনলে বিচারকদের বান্দরবানে বদলি করা হতো। এগুলো দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তবে আমরা বিশ্বাস করি, ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল হলে বিচারকদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।'
এই পর্যায়ে হাইকোর্ট প্রশ্ন করেন, 'তাহলে একটা অন্তর্জ্বালা থেকেই [আবেদন দায়ের] করেছেন?'—জবাবে রিটকারীর আইনজীবী সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়েন।
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা চাওয়া হয়, যেখানে সুপ্রিম কোর্টকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
পরবর্তী পর্যায়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গত অক্টোবরে এক রুল জারি করে জানতে চান—বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা উচিত নয়।
বর্তমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
অন্যদিকে, ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান অনুযায়ী, এই ক্ষমতা ছিল সুপ্রিম কোর্টের হাতে। এতে ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক কার্যক্রম তদারকি ও বিচারকদের প্রয়োজনে শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ারও সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত ছিল।