৯ বছরে ঢাকাবাসী মাত্র ৩১ দিন স্বাস্থ্যকর বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়েছে: গবেষণা

সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৯ বছরে ঢাকার বাসিন্দারা মাত্র ৩১ দিন স্বাস্থ্যকর বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত (৩ হাজার ১১৪ দিনের তথ্য) এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাত্র ৩১দিন ঢাকার বাতাসের মান ছিল 'স্বাস্থ্যকর' ; ৬২৪ দিন বাতাসের মান ছিল 'মধ্যম'; ৮৭৮ দিন ছিল 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর'; ৮৫৩ দিন ছিল 'অস্বাস্থ্যকর'; ৬৩৫ দিন ছিল 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর' এবং ৯৩ দিন ছিল 'বিপজ্জনক'।
আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়'- শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপস চেয়ারম্যান আহমেদও ঢাকার বায়ু দূষণের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'বায়ুর মান দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।'
তিনি জানান, ২০২১ সালে ৮৬ দিন ঢাকার বাতাসের মান ছিল 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর', ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৩ দিনে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো,
২০২৩ সালে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪ দিন ছিল 'বিপজ্জনক', যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ৩৬৬ দিনের মধ্যে 'বিপজ্জনক' দিনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দিনে।
তিনি আরও বলেন, 'গত ৯ বছরের মধ্যে ২০২৩ ও ২০২১ সালে ঢাকার বাতাসের মান সবচেয়ে বেশি দিন 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর' ছিল। এই পুরো সময়ে ঢাকাবাসী মাত্র ৩১ দিন স্বাস্থ্যকর বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার।
তিনি বলেন, 'বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই দূষণের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি এখনই দূষণ বন্ধ করা না যায়, তবে পরিণতি ভয়াবহ হবে, বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।'
বাপার সহ-সভাপতি এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'দূষিত বায়ুর কারণে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আগে দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ সীমান্তবর্তী (ট্রান্সবাউন্ডারি) দূষণ। এই সীমান্তবর্তী চলাচলের কারণে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ মাইক্রোগ্রাম বায়ু দূষণ হয়।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'প্রথমে আমাদের নিজেদের দেশের দূষণ বন্ধ করতে হবে। এরপর ভিশন ২০৩০ এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করে সীমান্তবর্তী দূষণ বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।'
কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং কঠিন বর্জ্য কম্পোস্ট করে দূষণ কমানোর দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান এম শহীদুল ইসলাম বলেন, 'কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে গত ১৫ বছরে দেশে দূষণ বেড়েছে। আগের সরকার একের পর এক পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প হাতে নিয়ে শুধু সুন্দরবন নয়, গোটা দেশের পরিবেশ ধ্বংস করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিক।'
বিশ্ব ধরিত্রী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।