উপাচার্য অপসারণের এক দফা দাবি ঘোষণা; তালা ভেঙে হলে ঢুকলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা
 
তালা ভেঙে হলে ঢুকেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে ছয়টি ছাত্র হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসময় শিক্ষার্থীদের কোনো বাধা দেয়নি।
এর আগে দুপুর পৌনে একটার দিকে তারা ক্যাম্পাসের 'দুর্বার বাংলা চত্বর'-এ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রতিটি বিভাগের সামনে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে হল খুলে দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে প্রশাসনের কোন সাড়া না পেয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে 'স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার'-এ প্রেস ব্রিফিং করে একটি ঘোষণা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন ঘোষণাটি পড়ে শোনান।
ওই ঘোষণায় বলা হয়, 'যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যেহেতু ভিসি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, যেহেতু ভিসি নেট, পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন, যেহেতু ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন, সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি। এই ভিসিকে অপসারণ আমাদের একমাত্র দাবি।'
ওই ঘোষণায় আরও বলা হয়, 'একই সঙ্গে নতুন ভিসির অধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।'
ঘোষণাপত্র পাঠ করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা খুলে ভেতরে ঢোকার ঘোষণা দেন।
গত রোববার দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা এক জোট হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় ফটকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের কেউ বাধা দেয়নি।
যদিও বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিষেধাজ্ঞা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও সন্তান না পাঠাতে অভিবাবককে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছিল কুয়েট প্রশাসন। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর থেকে তারা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে প্রশানের সাড়া না পেয়ে খোলা আকাশে তারা অবস্থান করছিল।
এছাড়া, সোমবার বিকেলে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ জানান, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়।
তাদের দেওয়া প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট গ্রহণ করে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওযা হয়েছে।
এছাড়া আগামী ২ মে শিক্ষার্থীদের জন্য সব আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে, গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হোচেন আলী কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া ২২ জনের নাম ও পরিচয় এভাবে বাইরের কোনো ব্যক্তির পক্ষে জানা সম্ভব না।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

 
             
 
 
 
 
