‘মার্চ ফর গাজা’: ঘোষণাপত্র পাঠে শেষ কর্মসূচি, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক-চুক্তি বাতিলে মুসলিম দেশগুলোকে আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত গণজমায়েত কর্মসূচি 'মার্চ ফর গাজা' শেষ হয়েছে। আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৪টার পর ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হয়। এর আগে বিকাল ৩টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন। ঘোষণাপত্রে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো এবং ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি সব ধরনের চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়।
ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে 'প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ' নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক। এতে সংহতি জানানো বিভিন্ন দলের নেতারাও অংশ নেন।

এদিন বিকাল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে শুরু করেন। উদ্যানের প্রতিটি গেটে বিপুল সংখ্যক মানুষের মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: 'মার্চ ফর গাজা'র মঞ্চ থেকে পাসপোর্টে 'এক্সেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহালসহ যেসব দাবি জানানো হলো
মিছিলে উপস্থিত জনতা 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন', 'ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করো', 'ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো' ইত্যাদি স্লোগান দেন। তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা গেছে।
আয়োজকদের দাবি, ঢাকায় ফিলিস্তিনের পক্ষে এটিই হবে সবচেয়ে বড় জমায়েত। তারা দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের গণমাধ্যম সমন্বয়ক শেখ ফজলুল করীম মারুফ জানিয়েছেন, দুপুর ২টায় পাঁচটি পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু হয়ে ৩টায় উদ্যানে গিয়ে মিলিত হবে। এসব পয়েন্ট হলো—বাংলামোটর, কাকরাইল মোড়, জিরো পয়েন্ট, বকশিবাজার মোড় ও নীলক্ষেত মোড়।

তবে কর্মসূচির সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মার্চ হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো মিছিল মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে যাবে না, বরং সরাসরি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন অংশগ্রহণকারীরা।

এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ও মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু), খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ প্রমুখ।

এছাড়া দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও ইউটিউবার এনায়েত চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোক্তার আহমেদ, ড. জাহাঙ্গীর কবির, উপস্থাপক আরজে কিবরিয়া, উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান সোহাগ, অভিনেতা তামিম মৃধা এবং টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলামও এ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এসএম ফরহাদসহ অনেকেই ভিডিও বার্তায় কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।