সাভারে ৪০ দিনে ৫ বাসে ডাকাতি, আজ আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ২

সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মাত্র ৪০ দিনের ব্যবধানে ডাকাতির শিকার হয়েছে পাঁচটি বাস। আজ (১১ এপ্রিল) সকালে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে একই কায়দায় দুটি চলন্ত বাসে ছুরি দেখিয়ে যাত্রীদের গয়না লুট করেছে একদল অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। এসব ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
আজ প্রথম ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে, ঢাকা-আরিচা হাইওয়ের সি অ্যান্ড বি এলাকায় নবীনগরগামী রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে। বাসটির এক যাত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, 'সকালে রেডিও কলোনি এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য রাজধানী পরিবহনের বাসে উঠি। বাসটি সিএন্ডবি ব্রিজের কাছে পৌঁছানোর আগেই তিনজন ছিনতাইকারী চাকু হাতে ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলে। বাস থামার সঙ্গে সঙ্গেই তারা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে বাস থেকে নেমে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'তারা [ছিনতাইকারী] মোট তিনজন ছিল, সম্ভবত আগেই বাসে উঠেছিল। কারোর মুখে মাস্ক ছিল না। বাসে অনেক যাত্রী থাকলেও কেউ প্রতিবাদ করেনি। সবাই অস্ত্রের ভয়ে চুপচাপ বসে ছিল।'
ছিনতাইয়ের ঘটনায় কিছুটা হতবাক হয়ে পড়ায় বাসটির কোনো ছবি কিংবা নাম্বার সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।
মাত্র আধঘণ্টা পর, দুপুর ১২টার দিকে একই মহাসড়কের ব্যাংক টাউন ব্রিজ এলাকায় দ্বিতীয় ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। এবার সাভার পরিবহনের একটি বাসে উঠে কয়েকজন ব্যক্তি যাত্রীদের ছুরির মুখে জিম্মি করে গয়না ছিনিয়ে নেয়। বাসটিতে থাকা স্থানীয় এক সিনিয়র সাংবাদিক তায়েফুর রহমান ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমি স্ত্রী-সন্তানসহ দুপুর ১২টার দিকে ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে শ্যামলী যাওয়ার জন্য সাভার পরিবহনের একটি বাসে উঠি। বাসটি ব্যাংক টাউন ও পুলিশ টাউন এলাকার মাঝামাঝি একটি ব্রিজ পার হচ্ছিল, তখন বাসে থাকা তিন থেকে চারজন ব্যক্তি মহিলা যাত্রীদের দিকে ছুরি তাক করে তাদের গয়না লুট করে।'
তায়েফুর আরও জানান, ডাকাতরা তার স্ত্রীর গলার লকেট ও চেইন ছিনিয়ে নেয়। বাসে ২০-২৫ জন যাত্রী ছিলেন। তারা মূলত মহিলাদের গয়না ছিনালেও কারও মোবাইল ফোন নেয়নি। গাবতলীতে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা বাস চালককে একটি কাউন্টারে আটকে রাখে। পরে তায়েফুর বাস থেকে নেমে আসেন।
তিনি ধারণা করছেন, ডাকাতরা ব্যাংক টাউন ও পুলিশ টাউন এলাকার মধ্যবর্তী ব্রিজে বাসটি থামিয়ে সেখানেই নেমে যায়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি মাসের ৪ তারিখও ব্যাংক টাউন ব্রিজের কাছাকাছি চলন্ত ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে একই ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ও সোনার গয়না লুট করে ফুলবাড়িয়া এলাকায় পালিয়ে যায়। বাস ড্রাইভার ও হেল্পারও ডাকাতির পর বাস রেখে পালিয়ে যায়।
ওই বাসের এক যাত্রী রিপন সরকার জানান, তিনি চন্দ্রা থেকে ঢাকাগামী ইতিহাস পরিবহনের বাসে দুপুর ২টার দিকে উঠেছিলেন। 'পথে তিনজন ব্যক্তি বাসে উঠে ছুরির মুখে যাত্রীদের চুপ করে থাকতে বলে। তারা যাত্রীদের সোনার গয়না, নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন লুট করে পালিয়ে যায়,' বলেন রিপন।
এই ঘটনায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল জানান, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মামলায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, ২৫ মার্চ রেডিও কলোনি এলাকায় শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসেও একই ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারও আগে, ২ মার্চ ব্যাংক টাউন ব্রিজের কাছাকাছি রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে লুটপাট করা হয়।
বারবার এই এলাকায় একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে প্রশ্ন উঠছে—ব্যাংক টাউন ব্রিজ এলাকা কি বাস ডাকাতির হটস্পটে পরিণত হচ্ছে? অথচ এই ব্রিজের কাছেই রয়েছে একটি পুলিশ চেকপোস্ট।
ডাকাতির ঘটনা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কর্মকর্তা জুয়েল বলেন, 'ডাকাতির ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটে। আমরা অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'
এ বিষয়ে সাভার থানার পরিদর্শক মো. আশিক বলেন, '৪ এপ্রিলের ঘটনায় বাসের ড্রাইভার ও হেল্পারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজকের লুট হওয়া বাসের চালক ও সহকারীকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ব্যাংক টাউন বাস স্ট্যান্ড নিয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।'
স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের দাবি, পুলিশের চেকপোস্ট থাকা সত্ত্বেও বারবার ডাকাতির ঘটনা ঘটায় পুলিশের তৎপরতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তারা এই রুটে পুলিশের আরও কঠোর নজরদারি ও টহল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, শুধু চালক বা হেল্পার নয়, ডাকাতদের পুরো চক্রকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে।
সাভার পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হবে?