গাজীপুরে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদসহ কয়েকটি দাবিতে সড়ক অবরোধ শ্রমিকদের

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে একটি কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে ও কালিয়াকৈর উপজেলায় কয়েকটি দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা।
আজ রোববার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও একটি আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। এসময় সেখানের যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সড়ক দুটিতে যান চলাচল শুরু হয়।
পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার বিএসআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের জের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল ৭টা থেকে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
পরে সকাল পৌনে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল গিয়ে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেন।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ কারখানাটির প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের গত ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস এবং ওভারটাইমের টাকা পরিশোধের তারিখ নির্ধারণের দাবি জানায়। পরে কর্তৃপক্ষের গত ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া আগামী ২৩ মার্চ পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তখন তা মানতে রাজি না হওয়ায় পরে গত ১০ মার্চ দিনভর কর্মবিরতি পালন শেষে সন্ধ্যায় কারখানা ছেড়ে যান তারা।
পরদিন ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) সকালে কাজে যোগ দিতে এসে প্রধান ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। এতে শ্রমিকেরা আবারো বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অনুরোধে আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে আজ রোববার (২৩ মার্চ) পাওনা পরিশোধে কারখানা মালিকের সিদ্ধান্ত মেনে নেন শ্রমিকেরা। শ্রমিকরা জানান, তারা বেতন পরিশোধের আগে কাজে যোগ দেবেন না।
বেতন পরিশোধের নির্ধারিত তারিখে আজ সকালেও কারখানায় গিয়ে প্রধান ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকেরা। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অনুরোধে মহাসড়ক ছেড়ে কারখানার প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।
আন্দোলনরত শ্রমিক রেহানা বলেন, আমাদের গত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বকেয়া আছে। তাছাড়া ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করার কথা ছিল আজ। আজ সকালে এসে দেখি অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ দিয়েছে। এ কারণে আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক ইকবাল হোসেনের মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের ভান্নারা এলাকায় দেইয়্যু বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ছুটির টাকা, টিফিনের টাকা ও ঈদ বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল শনিবার থেকে আন্দোলন শুরু করে আসছে।
আজ রোববার সকালে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর সকাল ৯টার দিকে কিছু সংখ্যক স্টাফ ও বহিরাগত লোকজন ধাওয়া দেয়। এতে বহিরাগতদের সাথে শ্রমিকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে ও তিন-চারজন শ্রমিক আহত হন। এসময় শ্রমিকরা উক্ত কারখানার মেইট গেট ও অভ্যন্তরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
এসময় আন্দোলনরত শ্রমিকরা অন্য কারখানার শ্রমিকদের বের করার চেষ্টা করলে সেগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। লিরিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে দেরি করায় কারখানার প্রধান ফটক ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে এবং একজন মহিলা শ্রমিকের মাথায় ইট লেগে আহত হয়। বর্তমান শ্রমিকরা দেইয়্যু ফ্যাক্টরির সামনে অবস্থান করছে। ঘটনাস্থলে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও জেলা পুলিশ উপস্থিত রয়েছে।
এসব বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর শ্রমিক বিক্ষোভ শ্রমিকদের দাবি আদায় করিয়ে দেয়া হবে-এমন আশ্বাস দিয়ে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
তিনি আরো জানান, দেইয়্যু কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে মালিকপক্ষের আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।