এস এম ফারুকীর ৭২১ কোটি টাকা ‘রেমিট্যান্স’: অনিয়ম হয়নি দাবি তার, তবে কর বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত

বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স হিসেবে দেখিয়ে ৭২১ কোটি টাকা দেশে আনার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আলোচনায় আসা প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান এস এম ফারুকী হাসান দাবি করেছেন, তার আয় বৈধ এবং তিনি বৈধ প্রক্রিয়াতেই অর্থ দেশে এনেছেন।
বুধবার (১৯ মার্চ) তার পক্ষে ব্যারিস্টার দেওয়ান হোসেনের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, এস এম ফারুকী হাসান চীন ও তুরস্ক সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানি থেকে বৈধভাবে আয় করা অর্থ বৈধ চ্যানেলে দেশে এনেছেন এবং সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রণোদনা গ্রহণ করেননি।
তিনি কোনো চাতুরতার আশ্রয় না নিয়ে ওই অর্থ তার কর ফাইলে দেখিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
'ফারুকী হাসান সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এবং তা কর কর্তৃপক্ষ অনুমোদনও দিয়েছে। এতে কোনো প্রক্রিয়াগত ব্যত্যয় ঘটেনি।'
তবে, তিনি কেন সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা নেননি, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি বিবৃতিতে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ফারুকীকে নিয়ে '১৮০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে নিজের কাছেই ৭২১ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠান যে রহস্যময় ব্যক্তি' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দেশে অবস্থান করে বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শ ফি হিসেবে আয়ের অর্থ দেশে আনা হলে তার ওপর স্বাভাবিক কর প্রযোজ্য।
সোমবার (১৭ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এক মতবিনিময় সভায় বলেন, 'একজন ব্যক্তি… ৭৩০ কোটি টাকা [প্রকৃতপক্ষে ৭২১ কোটি টাকা] দেশে এনেছেন—নিজেকে একজন কর্মী হিসেবে পরিচিতি দিয়ে দাবি করেছেন তার এই অর্থ করমুক্ত।'
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরামর্শ ফি যদি দেশে আনা হয়, তবে সেটি করমুক্ত নয়। সাধারণত ব্যাংকগুলো শুরুতে ১০ শতাংশ কর কাটে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করা হয়।
কর আইন বিশেষজ্ঞ এবং স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া টিবিএসকে বলেন, 'বাংলাদেশে বসে বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শ ফি হিসেবে আয় হলে, তথ্যপ্রযুক্তি খাত ছাড়া অন্য যে কোনো খাতের আয়ের ওপর কর প্রযোজ্য।'
এনবিআরের কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ মো. আমিনুল করিম টিবিএসকে বলেন, 'এই টাকার ওপর কর হওয়ার কথা। কেন আদায় হয়নি, তা স্পষ্ট নয়।'
এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, ফারুকী হাসান পরামর্শ ফি হিসেবে অর্থ ঘোষণা দিলেও এর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
এনবিআরের কর নীতির আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'উনি যদি দেশে বসে বিদেশ থেকে বৈধভাবেও পরামর্শ ফি হিসেবে অর্থ আনেন, তবে তার ওপর কর প্রযোজ্য।'
তিনি আরও বলেন, 'আইন অনুযায়ী, এনবিআর গত ছয় বছরের জন্য তার কাছ থেকে কর দাবি করতে পারে। তবে, এর আগের সময়ের অর্থও যদি কোথাও বিনিয়োগ হয়ে থাকে, তবে সেটির ওপরও কর প্রযোজ্য।'
অন্যদিকে, এস এম ফারুকী হাসান দাবি করেছেন, তিনি বিদেশ থেকে আনা অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন। এর অর্থ হলো, অতীতের যে কোনো বছরে আনা অর্থের ওপরই তাকে কর দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন।'
তবে, এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।