গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে আরো ১ কারখানা বন্ধ ঘোষণা

শ্রমিক আন্দোলনের জের ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় অবস্থিত গ্লোবাস গার্মেন্টস লিমিটেড লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকরা আজ বুধবার (১২ মার্চ) সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলাধীন মৌচাকের গ্লোবাস গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানায় গত শনিবার (৮ মার্চ) কয়েকজন শ্রমিককে ডেকে নিয়ে মারধর করে কারখানার স্টাফরা। এরপর শ্রমিকরা কারখানার ভেতর আন্দোলন শুরু করেন। এতে কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিক-স্টাফদের ঝামেলা মিটে গেলেও, গতকাল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ কারখানা খোলার দাবিতে শ্রমিকরা ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করে আসছিল।
সূত্র আরো জানিয়েছে, গতকাল শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে মহাসড়কে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিরাপত্তার কারণে আশপাশের ১৫টি কারখানা মঙ্গলবারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের পর কারখানার ফটকে লে-অফ (বন্ধ) ঘোষণার নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আজ সকালে কারখানায় গিয়ে শ্রমিকরা নোটিশ দেখতে পান।
পরবর্তীতে শ্রমিকরা আজ সকাল থেকে আবারও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন এবং সাড়ে ১০টার দিকে যান চলাচল শুরু হয়।
কারখানা বন্ধের নোটিশে বলা হয়েছে, 'এতদ্দ্বারা গ্লোবাস গার্মেন্টস লিমিটেড এর কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকবৃন্দের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, গত ৮ মার্চ তারিখে সংঘটিত বেআইনি শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বিগত তিনদিন বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এর ধারা ১৩(১) এর প্রেক্ষিতে কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় শ্রম আইনের ধারা ১৬ অনুযায়ী আগামী ১২ মার্চ হতে কারখানা লে অফ বন্ধ ঘোষণা করা হলো।'
নোটিসে গ্লোবাস গার্মেন্টস লিমিটেড এর পক্ষে প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বাক্ষর করেছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, 'গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলাধীন মৌচাক এলাকায় অবস্থিত গ্লোবাস কারখানার শ্রমিকরা গতকালের মতো আজও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় সাময়িকভাবে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। বর্তমানে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানচলাচল শুরু হয়েছে।'
এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজার এলাকায় গাছা রোডে ইউনিক ডিজাইন কারখানার ৭৮ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। পরে তাদের সাথে সহানুভূতি দেখিয়ে আরো ৫২ জন শ্রমিক কাজে যোগদান করা থেকে বিরত থাকেন। পরে তাদেরও আটক করা হয়। এরই প্রতিবাদে ও বকেয়া পাওনার দাবিতে আজ বুধবার সকালে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে অন্য শ্রমিকদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়। তারপরেও দেড় শতাধিক শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করেন। পরে অন্য শ্রমিকরাও ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের সাথে যোগ দিয়ে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানায়।
পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, 'শিল্প পুলিশের মধ্যস্থতায় ইউনিক ডিজাইন কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় রাজি হলে, শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে আলোচনায় বসেন। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হলে অন্য শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে।'
তিনি আরো বলেন, বকেয়া বেতনসহ ৮ দফা দাবিতে বারতোপা এলাকায় খান টেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
তাদের ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে– আট কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা, ১৫ রমজানের মধ্যে গত মাসের বেতন পরিশোধ করা এবং ২০ তারিখের মধ্যে নতুন-পুরোনো সকলের ঈদ বোনাস দেওয়া।
জহিরুল ইসলাম বলেন, 'শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের কাজ চলছে।'