গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গি এলাকায় বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে ও বকেয়ার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। পাশাপাশি, কারখানা শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় কালিয়াকেরের মৌচাক এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। এতে এই দুই মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
দুই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই পায়ে হেঁটে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ৭টা থেকে প্রথমে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এসে সড়ক অবরোধ করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল।
অপরদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় অবস্থিত গ্লোবাস কারখানার শ্রমিককে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তার শঙ্কায় মৌচাক এলাকায় আশপাশের আরো অন্তত ১৫টি কারখানা আজকের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানান, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের কারখানা শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন গত ৯ মার্চ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকরা গতকাল (১০ মার্চ) থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরেই অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ দিনভর শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে তালবাহানা করেন। পরে বিকেলে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে যান।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন, কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশ দেখে শ্রমিকরা প্রথমে সকাল ৭টা থেকে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো যোগাযোগ না করায় একপর্যায়ে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোসেন মার্কেট ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামেনে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

কারখানার সামনে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, 'এতদ্দ্বারা অত্র কারখানার সকল কর্মী ও কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১০ মার্চ অনুমান সকাল ১০ টার সময় কর্মী ও কর্মচারীগণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। কর্মী ও কর্মচারীগণকে কাজে যোগদানের জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কর্মী ও কর্মচারীগণ কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকে। কর্মী-কর্মচারীগণের এই ধরনের আচরণ অবৈধ ধর্মঘটের শামিল।'
'কর্তৃপক্ষ মনে করছে, উচ্ছৃঙ্খল কর্মী-কর্মচারীগণ কারখানাতে যে কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। যার কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম-আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক ১১ মার্চ হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল।'
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, 'পরবর্তীতে কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ যথারীতি নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। প্রকাশ থাকে যে, সিকিউরিটি ও অন্যান্য জরুরি সেবা প্রদানকারীগণ উক্ত বন্ধের আওতা বহির্ভূত থাকবে।'
অপরদিকে, জেলার কালিয়াকৈর উপজেলাধীন মৌচাকের গ্লোবাস কারখানায় গত শনিবার কয়েকজন শ্রমিককে ডেকে নিয়ে মারধর করে কারখানার স্টাফরা। এরপর শ্রমিকরা কারখানার ভেতর আন্দোলন শুরু করেন। এতে কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে শ্রমিক-স্টাফদের ঝামেলা মিটে গেলেও আজও কারখানা বন্ধ রয়েছে।
এ কারণেই শ্রমিকরা বিক্ষোভ শেষে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে মহাসড়কে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিরাপত্তার কারণে আশপাশের ১৫টি কারখানা আজকের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এ পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, 'সকাল পৌনে ১১টার দিকে কালিয়াকৈর এলাকার শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়। তবে, টঙ্গীর শ্রমিকরা এখনো মহাসড়ক ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না। তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারা সরে গেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কও চালু হবে।'