হাসিনার পতনের পর যেভাবে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ নাক গলাচ্ছে ভারত

গত ৭ মাস ধরে বাংলাদেশের বিষয়ে 'উদ্বেগের' কথা বলেছে ভারত, যা এক ব্যতিক্রমী ধারা। এদেশে মরণাপন্ন গণতন্ত্রকে নিয়ে যে প্রতিবেশীর মাথাব্যথাই ছিল না, যে বিষয়কে নয়াদিল্লি বরাবর ঢাকার 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে মন্তব্য করেছে— এখন সেটাই ভারতের গভীর আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
আর সেটা ঘটেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে।
গত ৭ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, 'বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন' চায় ভারত। তিনি বলেন, ভারত একটি স্থিতিশীল, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের সমর্থক। ভারত চায়, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের নিষ্পত্তি করুক।'
এসময় জয়সওয়াল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু 'নির্যাতন' নিয়ে ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন, এবং তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব যে অন্তর্বর্তী সরকারের সেটি একাধিকবার উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফিরে দেখেন, তখন বাংলাদেশের বিষয়ে মন্তব্য করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন জয়সওয়াল সাহেবরা। তারা এটিকে বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে উল্লেখ করেন। ওই সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত করতে, ৭ জানুয়ারি একপাক্ষিক ও জাল একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হাসিনা— যা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করেছিল। এসময় সারাবিশ্ব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানালেও— ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ৫ তারিখেও বলেন, "আমরা 'অত্যন্ত ধারাবাহিকভাবে' বলে আসছি বাংলাদেশে নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়।"
বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা বর্জিত, ক্ষমতাচ্যুত এই নেত্রীকে এখন আশ্রয় দিচ্ছে ভারত— যিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে নিজ হাতে বছরের পর বছর ধরে ভেঙেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করার দায়ও রয়েছে যার ওপরে। এখন তাকে ভারত থেকে সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্যও দিতে দেওয়া হচ্ছে।
এত অন্যায়ের পরেও, হঠাৎ করেই আজ বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের 'উদ্বেগ' দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা
শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামল, কারচুপি ভরা কথিত নির্বাচন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনাবহুল হলেও— ভারত দৃঢ়ভাবেই হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে গেছে।
২০২৩ সালের আগস্টে হাসিনার সরকার যখন বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন, তখন ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করা ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র – কারোরই স্বার্থের অনুকূল হবে না – ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি।
ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে চাপ বাড়াচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হচ্ছিল, ব্যাপক দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনে বিঘ্নকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করে।
আনন্দবাজার জানায়, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক ভিসা নীতির বিষয়ে আপত্তি জানায় ভারত। এসময় 'বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপের' কড়া সমালোচনা করেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারতের অব্যাহত তদ্বিরে ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনের বিষয়ে শেষপর্যন্ত কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের সম্পৃক্ততা বহু বছর ধরে নানান রঙে, নানান রূপে দেখা গেছে।
২০১৪ সালে যখন হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ এদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে বর্জন করেছিল, তখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা এসে এরশাদকে ওই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করান। এরশাদ এতে সম্মতি দেননি, এমনকী তাঁকে জোর করা হলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন। কিন্তু, শেষপর্যন্ত তাঁর দল বিতর্কিত ওই নির্বাচনে অংশ নেয় রওশন এরশাদের নেতৃত্বে।
এভাবেই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের একদলীয় রাষ্ট্রের এক অন্ধকার আবর্তে নিমজ্জিত হয়—পরবর্তী এক দশকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ
শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামল, কারচুপি ভরা কথিত নির্বাচন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনাবহুল হলেও— ভারত দৃঢ়ভাবেই হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে গেছে।
২০২৩ সালের আগস্টে হাসিনার সরকার যখন বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন, তখন ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করা ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র – কারোরই স্বার্থের অনুকূল হবে না – ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি।
ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে চাপ বাড়াচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হচ্ছিল, ব্যাপক দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনকে বিঘ্নকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করে।
আনন্দবাজার জানায়, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক ভিসা নীতির বিষয়ে আপত্তি জানায় ভারত। এসময় 'বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপের' কড়া সমালোচনা করেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ভারতের অব্যাহত তদ্বিরে ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনের বিষয়ে শেষপর্যন্ত কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের সম্পৃক্ততা বহু বছর ধরে নানান রঙে, নানান রূপে দেখা গেছে।
২০১৪ সালে যখন হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ এদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে বর্জন করেছিল, তখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা এসে এরশাদকে ওই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করান। এরশাদ এতে সম্মতি দেননি, এমনকী তাঁকে জোর করা হলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন। কিন্তু, শেষপর্যন্ত তাঁর দল বিতর্কিত ওই নির্বাচনে অংশ নেয় রওশন এরশাদের নেতৃত্বে।
এভাবেই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের একদলীয় রাষ্ট্রের এক অন্ধকার আবর্তে নিমজ্জিত হয়—পরবর্তী এক দশকে।
ভারতের অবস্থান বদল
২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, জাতীয় নির্বাচনসহ বাংলাদেশের 'জাতীয় বিষয়ে' হস্তক্ষেপ করবে না ভারত সরকার।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। নির্বাচনসহ নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।"
বিশ্বশক্তিগুলো যখন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়াচ্ছিল— এইক্ষেত্রেও দোরাইস্বামী তেমন সময়েই এ মন্তব্য করেন।
এভাবে 'বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে' হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে বহু বছর ধরে বিবৃতি দিয়েছে ভারত— যতদিন হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন।
কিন্তু, গত বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে হাসিনা, তাঁর দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশে যে ভয়াবহ দমনপীড়ন ও হত্যা শুরু করে— তার প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলতে বাধ্য হন যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি 'ঘনিষ্ঠভাবে' পর্যবেক্ষণ করতে ভারত। কিন্তু, দিনকয়েক পরেই রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশের পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে অস্বীকার করেন, এবং একে বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলেও লঘু করার প্রচেষ্টা চালান। অথচ ওই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর গুলিতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। জয়সওয়াল তখন বলেছিলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। আমরা এটিকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করি।
আর তারপরেই সব বদলে যায়।
৫ আগস্টে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর, হঠাৎ করেই বাংলাদেশের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ভারতের উদ্বেগের জায়গা।
অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম 'এক্স' (সাবেক টুইটার) এ দ্রুতই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে বাস্তবিক ঝুঁকি থাকলেও— ভারতীয় গণমাধ্যমে একের পর এক অতিরঞ্জিত সব প্রচারণা চালানো হয়। হাজির করা কয় নানান অপতথ্য, নির্লজ্জভাবে চালানো হয় প্রোপাগান্ডা। বাস্তবের নানান ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয় ভারতের নিজস্ব এজেন্ডার ছাঁচে ঢেলে।
১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মোদি আবারও ১৪০ কোটি ভারতীয়র কাছে বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁর উৎকণ্ঠার কথা বলেন। এমনকী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে এক ফোনালাপে তিনি একটি 'গণতান্ত্রিক' বাংলাদেশের ওপর জোর দেন।
আর তখন থেকেই বাংলাদেশের কোনো বিষয়ই আর অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকেনি ভারতের দৃষ্টিতে। বাংলাদেশের সবকিছুতেই যেন মন্তব্য করতেই হয় সাউথ ব্লককে। একমাত্র উহ্য থাকে সীমান্তে বিএসএফের দ্বারা যখন-তখন বাংলাদেশিদের হত্যা এবং বাংলাদেশে গণহত্যার দায়ে শত শত অভিযুক্তকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিয়মিত বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি, শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের পর মবের দ্বারা মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার নিন্দাও জানায় ভারত।
বাংলাদেশের এসব বিষয়ে ভারতের বক্তব্যগুলোকে 'অপ্রত্যাশিত' ও 'অনাকাঙ্ক্ষিত' বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের রাজনীতিবিদরা অনেক বছর ধরে ভারতে 'অবৈধ বাংলাদেশি' অনুপ্রবেশকারী নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ হাসিনার পতনের পরে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী ভারতে বসবাস করছে, যাদের কারো কারো বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাও রয়েছে। কিন্তু, এনিয়ে ভারত কোনো উদ্বেগ দেখায়নি।
অন্যদিকে সাধারণ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে ভারত। এসব ঘটনা বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।
ভারতের সাথে সীমান্তে একদিকে বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে, অন্যদিকে দেশটি আশ্রয় দিচ্ছে জুলাই গণহত্যার ক্রীড়ানক ও সংগঠকদের, বিচারের সম্মুখীন করতে যাদের ফেরত চায় বাংলাদেশ। অথচ ভারত, অনেক বেশি উদ্বেগ দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে, যে দেশটি শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ক্ষতগুলো থেকে এখনও সেরে ওঠার চেষ্টা করছে।