হাইকোর্টে সমস্যাগ্রস্ত ৫ ব্যাংক একীভূতকরণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার সরকারি সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের বেঞ্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে এটি খারিজের আদেশ দেন। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়েদ মহসিব হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বেঞ্চের কার্যতালিকায় রিটটি ছিল। রিটকারী পক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য শোনার পর আদালত রিটটি খারিজ করে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ রিটের বিরোধিতা করেন।
এর আগে, গত ১৮ নভেম্বর ব্যারিস্টার সাইয়েদ মাহসিব হোসেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর একটির সাধারণ বিনিয়োগকারী শহিদুল ইসলামের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন। আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিবাদী করা হয়।
রিটে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে প্রস্তাবিত 'সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক'-এর গঠনে বিদ্যমান সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় ও আনুপাতিক হারে নতুন শেয়ার ইস্যু করতে নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—এ মর্মে রুল চাওয়া হয়।
রিটকারীর দাবি ছিল, প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকে বিদ্যমান সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই এবং তাদের কোনো শেয়ার না দিয়েই একীভূতকরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রিটে আরও বলা হয়েছিল, পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে একীভূত করে "সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক" গঠনের উদ্যোগটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো শেয়ার না দিয়েই ব্যাংকগুলো বিলুপ্ত করে নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহসিব হোসেন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে তিনি জানতে পারেন যে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা নতুন ব্যাংকে কোনো শেয়ার পাবেন না, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ রক্ষায় নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি বহন করতে হবে। সাম্প্রতিক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়েছে—এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার সুযোগ নেই। তাঁর মতে, এটি সম্পূর্ণভাবে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থবিরোধী এবং সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল।
তবে সোমবারের শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ বলেন, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫–এর অধীনে ব্যাংকগুলো একীভূত করা হয়েছে এবং ওই অধ্যাদেশে শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। সুতরাং আইনি ভিত্তিতেই রিটটি চলমান রাখা সম্ভব নয়।
এর আগে, ৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ পাঁচ সংকটাপন্ন বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। প্রস্তাব অনুযায়ী ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নতুন ব্যাংকের জন্য দুটি নাম প্রস্তাব করা হয়—"ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক" এবং "সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক"। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন ব্যাংকটি পেশাদার ও বাণিজ্যিক নীতিতে পরিচালিত হবে।
