তারল্য সংকটের কারণেই পাঁচ ইসলামি ব্যাংক একীভূত করতে হয়েছে: গভর্নর
তারল্য সংকটে থাকা পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে 'বাংলাদেশ ইসলামিক ফাইন্যান্স সামিট ২০২৫'-এ বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেসব ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে, তাদের জন্য একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের প্রতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা আশা করি, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়িত্বশীল ও প্রতিনিধিত্বমূলক হবেন।'
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখতে ইসলামী এবং প্রচলিত—উভয় ব্যাংককেই উচ্চমানের অডিটিং স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে হবে মনে করেন গভর্নর। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে ইসলামী ফাইন্যান্সকে শক্তিশালী করতে ভালো হিসাবরক্ষণ, সুশাসন ও অডিটিং প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়নে কাজ করছে এবং আমরা বৈশ্বিক সর্বোত্তম অনুশীলন অনুসরণ করতে চাই। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা মেনে চললে আমানতকারী, বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডার সবাই উপকৃত হবেন। ভালো অডিটিংই শক্তিশালী ইসলামী ফাইন্যান্স নিশ্চিত করতে পারে।'
গভর্নর স্বীকার করেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত কিছুটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে; যদিও সামগ্রিকভাবে খাতটি এখনো অনেকের তুলনায় ভালো অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী ইসলামী ফাইন্যান্স ভালো করছে। বাংলাদেশেও আমরা আরও ভালো অবস্থায় থাকতে পারতাম যদি ওই অস্থির সময় না আসত। তারপরও আমরা খাতটির প্রতি আস্থা রাখি এবং আমানতকারীরাও ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।'
আহসান এইচ মনসুর জানান, সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে কিছু ইতিবাচক ফলও এসেছে।
দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)-এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক এখন ভালোভাবে চলেছে এবং দেশের সবচেয়ে বড় গ্রাহকভিত্তি তাদেরই।
তিনি উল্লেখ করেন, একটি একক পরিবারের মাধ্যমে আইবিবিএল থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল, যা ব্যাংকটির সম্পদের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, 'এসব উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়ার পরও মানুষ আইবিবিএলের ওপর আস্থা রেখেছে।'
গভর্নর বলেন, আইবিবিএল তীব্র তারল্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল কিন্তু এখন তা কাটিয়ে উঠেছে। এমনকি এই বছর ইসলামি ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা এই শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত।
গভর্নর বলেন, 'তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।' তিনি আরও যোগ করেন, 'আমরা চাই ইসলামি ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী ব্যালেন্স শিট, উচ্চ পরিশোধিত মূলধন এবং সুশাসন থাকুক। আমরা আশা করি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়িত্বশীল ও প্রতিনিধিত্বমূলক হবেন।'
খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'আমরা চাই বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত পরিকল্পিত, সুশাসিত ও টেকসইভাবে বেড়ে উঠুক।'
