রেকর্ড মুনাফা, ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিজস্ব তহবিলে বছরে ১টি জাহাজ কেনার লক্ষ্য শিপিং করপোরেশনের
বৈশ্বিক শিপিং শিল্পে প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেখে রাষ্ট্রায়ত্ত সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) রেকর্ড মুনাফা এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির সহায়তায় নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর একটি করে নতুন জাহাজ অধিগ্রহণের মাধ্যমে তাদের বহর সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, 'আমরা বুধবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় নিজস্ব তহবিলে প্রতি বছর একটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে আরও পাঁচটি নতুন জাহাজ বহরে যুক্ত হবে।'
পর্ষদের সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করপোরেশনটি তার ৫৩ বছরের ইতিহাসে একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব ও মুনাফা অর্জন করেছে—মুনাফা ৩০৬.৫৬ কোটি টাকা, যা বছরে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি; এবং রাজস্ব ৭৯৮.২৮ কোটি টাকা, যা ৩৩.৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য মুনাফা বৃদ্ধির পরও করপোরেশন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে, যা গত অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিএসসির মতে, তাদের ব্যবসা ও মুনাফা বৃদ্ধির কারণ আন্তর্জাতিক শিপিং শিল্পে উচ্চ ফ্রেইট রেট এবং আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি তেলের ট্যাংকার বিক্রির মাধ্যমে মূলধনী মুনাফা।
যদিও বিএসসি অতীতে সরকারি তহবিল দিয়ে জাহাজ কিনেছিল, গত বছর এটি প্রথমবারের মতো নিজস্ব ৯৩৪ কোটি টাকার তহবিল ব্যবহার করে দুটি জাহাজ অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করে।
দুটি জাহাজের মধ্যে একটি—বাংলার প্রগতি— ইতোমধ্যেই বহরে যুক্ত হয়েছে এবং ২৬ অক্টোবর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এটি ৫.৭২ কোটি টাকা আয় করেছে বলে বিএসসি সূত্রে জানা গেছে।
অন্য জাহাজটি—বাংলার নবযাত্রা—ডিসেম্বরের মধ্যে বহরে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে, করপোরেশনটি মোট ৪৪টি জাহাজ অধিগ্রহণ করেছিল; বাংলার প্রগতি অক্টোবর মাসে যুক্ত হওয়ার পর এখন বহরে মাত্র ছয়টি জাহাজ রয়েছে। এই ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চীন থেকে সরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে ১,৫০০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছিল।
কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, 'শিপিং খাতে জাহাজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে কর্পোরেশনটি নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে আরও জাহাজ অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে, কারণ ক্রমাগত ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি এর অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে।'
রাজস্ব ও মুনাফা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এটি মূলত উন্নত পরিচালন দক্ষতা এবং শিপিং খাতে উচ্চ চার্টারিং ফি দ্বারা চালিত হয়েছে। অতীতে জাহাজগুলো প্রায়ই ব্যবহার করা হতো না, কিন্তু গত এক বছরে এমন একটি দিনও যায়নি যখন কোনো জাহাজ ব্যবহার করা হয়নি।'
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন জাহাজ সংযোজন রাজস্ব ও মুনাফা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
৭ বছরে মুনাফা বেড়েছে ১,৬৮৮%
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিপিং করপোরেশনের মুনাফা ছিল মাত্র ১৭ কোটি টাকা। সাত বছরে মুনাফা প্রায় ১,৬৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা বেড়ে ৭২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে উল্লম্ফন ঘটিয়ে ২১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২২৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
বিএসসির কর্মকর্তারা এর আগে এই অসাধারণ মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে চারটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছিলেন—পণ্য পরিবহনের জন্য শিপিং রেট বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভেসেলস (সুরক্ষা) (সংশোধন) আইন বাস্তবায়ন, ফিক্সড ডিপোজিটে উচ্চ সুদের হার এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।
করপোরেশনের অর্থ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির রাজস্ব ও মুনাফা ক্রমাগত বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্রেইট রেট বেড়েছে, যা কর্পোরেশনকে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত করেছে।'
তাছাড়া, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনসহ ফ্ল্যাগ ভেসেল আইন প্রয়োগকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন শিপিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করছে।
