চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি, নৌবাহিনীর অধীনে এনসিটি-ও গতিশীল

রপ্তানিখাতে নানান প্রতিকূলতা ও মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঙ্গে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনা করলে এমন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
অংশীজনদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম গতিশীলভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ)। তবে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আমদানি-রপ্তানি খাতে এক ধরনের ধীরগতিও ছিল।
সিপিএ'র এক অভ্যন্তরীণ পরিসংখ্যানে এসব বিষয় উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির চীফ পারসোনেল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন পরিসংখ্যানের বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস— অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বমোট ৯ লাখ ২৭ হাজার ৭১৩ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠানামা) হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ৮ লাখ ২৬ হাজার ৫২৮ টিইইউএস ছিল। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরে বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ১,১৮৫ টিইইউস। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার ১২.২৪ শতাংশ।
গত তিনমাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময়ে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১,০৩১টি।
গত অর্থবছরের একই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮ হাজার ৬০ মেট্রিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৯৪৪টি। ফলে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৩.৮৮ শতাংশ এবং ১.২২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করেছে। পাশাপাশি দেশে পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমস্ এর কলম বিরতি এবং শাটডাউনের মতো ঘটনায় বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের একান্ত সহযোগিতায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে এগুলো তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি— অবকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নৌবাহিনী পরিচালিত এনসিটিতে প্রবৃদ্ধি
চলতি বছরের ৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে বড় টার্মিনাল নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনা করছে নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। চলতি বছরের ৬ জুলাই এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের। অন্তর্বর্তী সরকার এ চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাশপাশি এ টার্মিনাল পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মানের বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
সিপিএ'র তথ্যমতে, এনসিটিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ এবং প্রবৃদ্ধি এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৯ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে এনসিটিতে। গত বছরের একই সময়ে এই টার্মিনালে যা ছিল ৩ লাখ ৮৯৫ টিইইউএস। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় ৪১ হাজার ৭৫৪ টিইইউএস বেশি। ফলে এ খাতে ১৩.৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
একই টার্মিনালে গত তিন মাসে ১৭৮টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫২টি। এই হিসাবে, গত অর্থবছরের তুলনায় ২৬টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৭.১১ শতাংশ।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবেও ইতিবাচক সূচক
অর্থবছরের হিসাব ছাড়াও – পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবেও চট্টগ্রাম বন্দরের সকল অর্জন ইতিবাচক সূচকে রয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর প্রথম ৯ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫০ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৮২৫ টিইইউএস। ফলে বেড়েছে ১,২১,৬২৫ টিইইউএস। অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধির হার ৪.৯৮ শতাংশ।
গত ৯ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়েও খাতেও প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি। এসময়ে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ২৭ লাখ ৪ হাজার ২৫৯ মেট্রিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩,১৬১টি। গত বছরের একই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে পরিমাণ ছিল ২,৮৬৪টি। এ হিসাবে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ১১.৭০ শতাংশ এবং ১০.৩৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন দ্য বিজনসে স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিগত সরকারের শেষ আমলে ডলার সংকটের ফলে আমদানির এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলার সংকট কাটিয়ে এলসি খোলা সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়েছে। এটি ইতিবাচক সূচক অর্জনে ভূমিকা রেখেছে।"