রেকর্ড বাজেট সহায়তায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে ৭৪ বিলিয়ন ডলার

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে নেওয়া রেকর্ড ৩.৪১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা ঋণে ভর করে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের দায় বেড়ে হয়েছে ৭৪.৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের দায় ছিল ৬৮.৮২ বিলিয়ন ডলার। গত পাঁচ বছরে এই ঋণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০.৮৮ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলেন, বড় প্রকল্পের জন্য নতুন ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের সংযমী নীতি থাকলেও দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এই বাজেট সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
এটি এক বছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ বাজেট সহায়তা। এর আগের রেকর্ড ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, ২.৬ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর জন্য ঋণের অর্থছাড় বৃদ্ধিও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক হিসাবে ভিত্তিতে তৈরি সর্বশেষ এই বৈদেশিক ঋণের পরিসংখ্যানে উন্নয়ন প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সরাসরি পাওয়া ঋণ এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নেই।
মুদ্রার বিনিময় হার ওঠানামার কারণে চূড়ান্ত হিসাবে পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
রোববার প্রকাশিত ইআরডির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৮.১১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়েছে। এই সময়ে সরকার ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করেছে ২.৬ বিলিয়ন ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরেরর বকেয়া ঋণের সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অর্থছাড় যোগ করে এবং আসল পরিশোধ বাদ দিয়ে নতুন ঋণের এই হিসাব করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এমআরটি লাইন-৬, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল ও হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিলানসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে বা বাস্তবায়ন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে বড় প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় বেড়েছে ।
তবে তারা আরও জানান, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণের তুলনায় বাজেট সহায়তা ঋণ বৈদেশিক ঋণের দায় বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। ঋণ পরিশোধের চাম কমাতে সরকারের কৌশল ছিল বড় কোনো মেগা প্রকল্পে ঋণ না নেওয়া। কিন্ত সরকার রিজার্ভকে সহায়তা দিতে ৩.৪১৪ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা ঋণ নিয়েছে, যার পুরোটাই ছাড় হয়ে গেছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও মাসরুর রিয়াজ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিল।
তিনি আরও বলেন, 'তারা বড় আকারে বা মেগা প্রকল্পে খুব বেশি ঋণ নেয়নি। এছাড়া পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পগুলো সরকার পর্যালোচনা করেছে এবং কিছু প্রকল্পে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত ছিল।
'কিন্ত দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ (যদিও এই হিসাব এখানে আসেনি) থেকে রেকর্ড পরিমাণ বাজেট সহায়তা নিয়েছে। এই বাজেট সহায়তা ব্যালান্স অভ পেমেন্ট ও রিজার্ভের জন্য সহায়ক ভূমিকা রেখেছে—যার কারণে বৈদেশিক ঋণের দায়ও বেড়েছে।'
মাসরুর রিয়াজ সতর্ক করে বলেন, 'আমাদের ঋণ বাড়ছে, সেইসঙ্গে পরিশোধও বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণের পরিশোধ ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে এখন থেকে আমাদের বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে আরও বেশি সতর্কভাবে এগোতে হবে। বড় মেগা ঋণে না যাওয়াই ভালো হবে। এছাড়া কঠিন শর্তে ঋণ বা অনমনীয় ঋণ নেওয়া যাবে না। কেবল গুরুত্বপূর্ণ ঋণ, যার থেকে দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে, সে ধরনের ঋণই নিতে হবে।'
পাইপলাইনে আরও ৪২.৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ
ইআরডির প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে ছিল বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ৪৩.৬০৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সামান্য কিছু বাদ দিলে পুরোটাই ঋণ।
এর আগে ২০২৩-২৫ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল কিছুটা বেশি—৪৩.৮৫০ বিলিয়ন ডলার।