বুধবার পর্যন্ত ২১% কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি, বড় অসন্তোষের খবর নেই: শিল্প পুলিশ

ঈদুল আযহা উদযাপনের আগে এখনও প্রায় ২১ শতাংশ বা ১ হাজার ৯৯৯টি শিল্প কারখানা এখনও কর্মীদের বোনাস পরিশোধ করেনি।
এর মধ্যে ৪৪৭টি টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের কারখানা। শিল্প পুলিশের গতকাল বুধবার (৪ জুন) বিকাল ৩টা পর্যন্ত হালনাগাদ করা তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।
বকেয়া বোনাসের পাশাপাশি উল্লেখিত কারখানাগুলোর মধ্যে ৮২টি এখনও কর্মীদের এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করেনি।
তবে শিল্প পুলিশ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) বলেছে, বেতন-বোনাস বকেয়া থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো কারখানায় বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি।
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (বেপজা) অধীনে মোট ২ হাজার ৮৮৮টি কারখানা পরিচালিত হচ্ছে।
দেশের মোট শিল্প কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ৬৮৬টি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত যেসব কারখানা বোনাস পরিশোধ করেনি, সেগুলোর মধ্যে ২৭৯টি বিজিএমইএ সদস্য, ১৩০টি বিকেএমইএ সদস্য, ৮১টি বিটিএমএ সদস্য ও ৭টি বেপজা এলাকায় পরিচালিত হয়।
বকেয়া বেতন-বোনাসের বিষয়ে মন্তব্য জানতে ফোন করা হলেও বিজিএমইএর প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সাড়া দেননি।
তবে বিকেএমইএর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের ৫৮০টি সদস্য কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মাত্র একটি কারখানায় বেতন নিয়ে সমস্যা ছিল। তবে এ নিয়ে কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যের পরও কারখানাগুলোতে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে এই সংখ্যা ক্রমেই কমবে।'
তিনি আরও বলেন, 'কোনো কোনো কারখানার শেষ সময়ের কিছু কাজ রয়ে গেছে। বেতন-বোনাস সব পরিশোধ করা হলে শেষ দিন বা বৃহস্পতিবার হয়তো শ্রমিকদের পাওয়া যাবে না। এই কারণে কেউ কেউ হয়তো বোনাস রেখে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার কাজ শেষে তা পরিশোধ করবেন।'
এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, মে মাস চার দিন আগে শেষ হলেও কতগুলো কারখানা কর্মীদের মে মাসের বেতন পরিশোধ করেছে, সে ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
তবে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে শ্রমিক ও মালিকরা বলেন, কিছু কারখানা মে মাসের অর্ধেক বা পূর্ণ বেতন পরিশোধ করেছে।
শিল্প পুলিশ বলেছে, কোনো বড় অস্থিরতা দেখা না গেলেও অন্তত দুটি কারখানার শ্রমিকদের একাংশ বেতনের দাবিতে রাজধানীর পল্টনে ডিআইএফই প্রধান কার্যালয়ে কিছু সময় অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়াও গাজীপুরের সিজনস ড্রেসেস লিমিটেড নামে একটি কারখানার মালিকপক্ষ বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে নিখোঁজ হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় ওই কারখানার বেতন পরিশোধের চেষ্টা চলছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান ডিআইএফই গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহার আলী মোল্লা। কারখানটিতে শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন।
মাহার আলী বলেন, 'ওই কারখানা যে প্রতিষ্ঠানের সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের কাজ করে, তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে পাওনা পরিশোধের জন্য চেষ্টা চলছে। এতে যুক্ত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। আশা করছি বৃহস্পতিবারের মধ্যে কারখানাটির শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।'
তিনি আরও জানান, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড নামে গাজীপুরের আরেকটি কারখানাও বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। 'এ কারণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তদের হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সহায়তায় পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
তিনি দাবি করেন, গত ঈদের তুলনায় এই ঈদের আগে বেতন-বোনাস ইস্যুতে অসন্তোষের পরিমাণ একেবারেই কম।
এদিকে টিবিএসের সাভার প্রতিনিধিও জানিয়েছেন, সাভারের কোনো কারখানায় বেতন-বোনাস ইস্যুতে অস্থিরতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ঈদের আগে মাহমুদ ডেনিমস লিমিটেড ও ডার্ড গার্মেন্টসসহ কয়েকটি কারখানায় অসন্তোষ চললেও তারা আগেই সমঝোতা করায় সেসব কারখানায় অস্থিরতার খবর পাওয়া যায়নি।
শ্রমিকদের বৃহত্তম প্রতিনিধিত্বমূলক প্ল্যাটফর্ম ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার টিবিএসকে বলেন, গতকাল বড় ধরনের অসন্তোষের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।