বুধবার পর্যন্ত ১৭ শতাংশ পোশাক-টেক্সটাইল কারখানায় বোনাস হয়নি

ঈদের আগে বুধবার (৪ জুন) বিকেল পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের ১৭ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়নি বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। অন্যান্য খাত মিলিয়ে দেশে মোট শিল্প কারখানার মধ্যে বোনাস পরিশোধ হয়নি এমন কারখানার সংখ্যা প্রায় ২১ শতাংশ।
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের তিন সংগঠন—বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)—এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (বেপজা) এলাকার আওতায় চলমান কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৮৮৮টি।
এর মধ্যে ৪৯৭টি কারখানা বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বোনাস পরিশোধ করেনি, যা মোট কারখানার ১৭ শতাংশেরও বেশি।
অন্যদিকে, অন্যান্য খাতসহ দেশে মোট শিল্প কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ৬৮৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৯৯টি কারখানা আলোচ্য সময় পর্যন্ত বোনাস দেয়নি, যা প্রায় ২১ শতাংশ।
বিজিএমইএ-এর সদস্য কারখানার মধ্যে ২৭৯টি, বিকেএমইএ'র ১৩০টি, বিটিএমএ'র ৮১টি এবং বেপজা এলাকার ৭টি কারখানা এখনো বোনাস পরিশোধ করেনি।
তবে বেতন-বোনাস ইস্যুতে বড় কোনো শ্রমিক অসন্তোষ হয়নি বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিপ্তরের (ডিআইএফই) কর্মকর্তারা।
শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, আলোচ্য কারখানাগুলোর মধ্যে ৮২টিতে এপ্রিল মাসের বেতনও বাকি রয়েছে।
তবে মে মাসের বেতন কতগুলো কারখানায় পরিশোধ হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি বাহিনীটি।
তবে কারখানাগুলোর মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কেউ কেউ আংশিক বা পুরো মাসের বেতন পরিশোধ করেছেন বলেও জানা গেছে।
তবে অন্তত দুটি কারখানার শ্রমিকদের একটি অংশ বেতনের দাবিতে রাজধানীর পল্টনে ডিআইএফই কার্যালয়ে কিছু সময় অবস্থান নিয়েছেন।
গাজীপুরের 'সিজনস ড্রেসেস লিমিটেড' নামের একটি কারখানার মালিক বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ না করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলেও জানা গেছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ডিআইএফই'র গাজীপুর কার্যালয়ের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মাহার আলী মোল্লা বলেন, 'ওই কারখানা যে প্রতিষ্ঠানের সাব-কন্ট্রাক্টিং কাজ করে, তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে আগামীকালকের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের চেষ্টা চলছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যুক্ত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আশা করছি কালকের [বৃহস্পতিবার] মধ্যে কারখানাটির শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে।'
তিনি আরও জানান, গাজীপুরের আরেকটি কারখানা 'হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড'-এর বেতন-বোনাস পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সহায়তায় পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তার দাবি, গত ঈদের তুলনায় এবার বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ অনেক কম।
বিজিএমইএ-এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. আনোয়ার হোসেনকে এ বিষয়ে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে বিকেএমইএ'র এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের ৫৮০টি সদস্য কারখানার মধ্যে মাত্র একটি কারখানায় বুধবার পর্যন্ত বেতন সমস্যা ছিল, কিন্তু তাতে কোনো অসন্তোষ হয়নি।
তিনি বলেন, 'শিল্প পুলিশের তথ্য দেওয়ার পর অনেক কারখানাই বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে। কোনো কোনো কারখানায় শেষ মুহূর্তে কিছু বাকি থেকেছে। ফলে বৃহস্পতিবার কাজ শেষে পরিশোধের পরিকল্পনা থাকতে পারে।'
এদিকে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাভারে বেতন-বোনাস নিয়ে কোনো অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।
ঈদের আগে মাহমুদ ডেনিমস, ডিয়ার্ড গার্মেন্টসসহ তিনটি কারখানায় অসন্তোষ থাকলেও আগেই সমঝোতা হওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী প্ল্যাটফর্ম ইন্ডাস্ট্রিআল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে টিবিএস-এর পক্ষ থেকে ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, 'বুধবার পর্যন্ত বড় ধরণের কোনো অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।'