পুঁজিবাজারে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির কর ব্যবধান বেড়ে ৭.৫ শতাংশ হতে পারে

ধুঁকতে থাকা শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে সরকার নন-লিস্টেড কোম্পানির সঙ্গে লিস্টেড কোম্পানির কর্পোরেট কর ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি হ্রাসকৃত হারে করের সুবিধা পেতে বিদ্যমান লেনদেনের শর্তও শিথিল করা হতে পারে।
বর্তমানে লিস্টেড কোম্পানির কর্পোরেট করহার ২০ শতাংশ। তবে কঠিন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক কোম্পানি এই হারে কর দিতে পারে না। ফলে তাদের ২২.৫ শতাংশ কর দিতে হয়। একইভাবে, নন-লিস্টেড কোম্পাানির কর্পোরেট কর ২৫ শতাংশ হলেও কঠিন শর্ত পূরণ করতে না পারায় তাদেরও কার্যত ২৭.৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে নন-লিস্টেড কোম্পানির কর ২৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। আর লিস্টেড কোম্পানিগুলো যাতে ২০ শতাংশ করের সুবিধা নিতে পারে, সেজন্য শর্ত শিথিল করা হবে। ফলে এই দুই গ্রুপের কোম্পানির কর ব্যবধান দাঁড়াবে ৭.৫ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বর্তমানে লিস্টেড কোম্পানিকে ২০ শতাংশ করের সুবিধা নিতে হলে তাদের সব ধরনের আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হয়। বাস্তবে কোম্পাানিগুলোর পক্ষে এই শর্ত পরিপালন করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা এই হ্রাসকৃত করহারের সুবিধা নিতে পারে না।'
'আগামী বাজেটে কেবল কোম্পানির আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে হতে হবে। ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ শর্ত বাতিল করা হতে পারে। ফলে অনেক কোম্পানির পক্ষে ২০ শতাংশ করহারের সুবিধা নেওয়া সম্ভব হবে,' যোগ করেন তিনি।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, লিস্টেড কোম্পানির সঙ্গে নন-লিস্টেড কোম্পানির করের ব্যবধান বাড়ানোর উদ্যোগ ইতিবাচক। এতে আরও বেশিসংখ্যক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে।
তবে তিনি মনে করেন, এর বাইরেও যেসব কমপ্লায়েন্স মানার শর্ত রয়েছে, তা শিথিল করা উচিত। এছাড়া কোম্পানিকে আইপিওতে আনার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া সহজ করা এবং সময় কমিয়ে আনা উচিত।
দেশের বৃহত্তম পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এ (ডিএসই) শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শর্ত শিথিল করা ও কর ব্যবধান গ্যাপ বাড়ানোর উদ্যোগ ভালো, তবে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে।
স্বল্পমেয়াদে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব আনতে এবং কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে বড় আকারের ফান্ড প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী মঙ্গলবার ঢাকায় এক বাজেট আলোচনায় বলেন, বর্তমানের লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে ৫ শতাংশ কর ব্যবধান আছে। এটি ১০ শতাংশে উন্নীত করলে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসবে।
এছাড়া ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎসে কর ০.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন চলছে। গতকাল (২৮ মে) ডিএসই সূচক নেমেছে ৪,৬১৫ পয়েন্টে—যা পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।