আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের জন্য জরুরি নয়: গভর্নর মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকলেও, ঋণ পাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ওয়াশিংটন সময় শুক্রবার আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তাদের সাথে আমাদের এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি, তবে আমাদের অবস্থান একেবারে দূরত্বেও নেই। যদি সমঝোতা না-ও হয়, তবুও কোনো বড় সমস্যা হবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের মিশনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মনসুর। যা আজ শনিবার শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৮টা ২২ মিনিটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেন প্রেস মিনিস্টার।
গভর্নর মনসুর বলেন, আমাদের নিজেদেরই ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করতে হবে, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের সংস্কারও করতে হবে। আইএমএফ কেবল সহায়ক ভূমিকা রাখবে। যদি মনে করি এই (ঋণ) সহায়ক নয়, তবে নেব না।
আইএমএফের সহায়তার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্ট সহায়তা না পেলেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। এটি মূলত একটি অতিরিক্ত সুবিধা; আমাদের না পেলেও সমস্যা নেই। রিজার্ভ ভাল আছে।
তিনি জানান, বৈদেশিক রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ শক্তিশালী রয়েছে, যেখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে, এবং রপ্তানি আয়ও এ বছর দ্বিগুণ বৃদ্ধির পথে রয়েছে। ফলে দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতিও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে মন্সুর বলেন, আলোচনার মূল বিষয় হলো সংস্কার — আর্থিক খাতের সংস্কার, কর ব্যবস্থার সংস্কার। অর্থ (ঋণ) মূল উদ্দেশ্য নয়।
তিনি আরও জানান, প্রধানত মুদ্রার বিনিময় হার এবং রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। "রাজস্বের বিষয়ে মোটামুটি সমঝোতা হয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো — বাজার এখন স্থিতিশীল, ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে না।"
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, দেশের স্বার্থের পরিপন্থী এমন কোনো শর্ত মেনে নিতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই বাধ্য নয়।
গভর্নর মনসুর বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কা হইনি, পাকিস্তানও হইনি। আমাদের এখন কোনো চাপে পড়ে ঋণ নিতে হচ্ছে না। ছয় মাস আগে হয়তো এমন অবস্থা ছিল, কিন্তু এখন নয়।
এসময় আর্থিকখাতে সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকৃত লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক খাতকে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলে অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রায় ২৪-২৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যদি কিছু (আইএমএফের ঋণ) সহায়তা পাইও, কয়েক বিলিয়নের বেশি পাব না। তাই সংস্কারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা 'কঠোর দরকষাকষির' চেয়ে নীতিনির্ধারণমূলক সংলাপ বলেও তিনি মন্তব্য করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।
অন্যান্য দাতা সংস্থার প্রসঙ্গে মনসুর বলেন, প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো অতিরিক্ত শর্ত থাকে না, তবে বাজেট সহায়তা ঋণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শর্ত থাকে।
তিনি যোগ করেন, আমার বিশ্বাস, এখন থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি কোনো বিনিয়োগ নয়; এটি মূলত সরকারের খরচ চালাতে সাহায্য করে, ভবিষ্যতে কোনো মূল্য তৈরি করে না।
এর আগে গতকাল (২৪ এপ্রিল) গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, আইএমএফ থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ পাওয়া এখন বাজার-ভিত্তিক ডলার বিনিময় হার চালু করার ওপর নির্ভর করছে।
প্রসঙ্গত, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অধীনে ২৩১ কোটি ডলার ইতিমধ্যে ছাড় হয়েছে। আরও ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে।