মৎস্য খাতের কম করহার সুবিধার অপব্যবহার, এনবিআরের নজরদারি

মৎস্য ও পোল্ট্রি খাত থেকে বড় আয় দেখিয়ে রিডিউসড ট্যাক্স রেট বা কম করহারের সুবিধা নেওয়া ব্যক্তিদের খোঁজে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা বিভাগ।
সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ও আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট ছাড়াও একাধিক ট্যাক্স কমিশনারেট অফিস থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের ট্যাক্স ফাইল রিওপেন ছাড়াও ব্যাংক স্টেটমেন্টের খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে একটি বড় শিল্পগ্রুপের চার শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবের খোঁজ করেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এক সিনিয়র কর গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, মৎস্য খাত থেকে আয় দেখিয়ে প্রায় ১৪০ কোটি টাকার কম করহারের সুবিধা নিয়েছেন তারা।
ওই চার জনের কর ফাইল ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার আবদুর রকিব।
তিনি বলেন, "আমরা প্রয়োজনীয় আয়সংক্রান্ত কাগজপত্র চাইব, সরেজমিনে যাচাই করব এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য নেব।"
এই খাত থেকে বড় অঙ্কের আয় দেখিয়ে কর ছাড়ের সুবিধা নেওয়া আরও অন্তত ৩০ জনকে এখন একই পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে।
সব মিলিয়ে অন্তত ১০০ জন ব্যক্তি তদন্তের আওতায় আছেন, যাদের বেশিরভাগই ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি আয় দেখিয়েছেন।
এছাড়া, মৎস্য খাত থেকে বড় অঙ্কের আয় দেখিয়ে কর সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে ১০ জন রাজনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখেছে সিআইসি। তাদের মধ্যে রয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বর্তমানে ব্যক্তির আয়ের ওপর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ হলেও মৎস্য খাতের আয়ের ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী এই কম করহারের সুবিধা নিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করেছেন।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, মৎস্য খাত থেকে আয়ের প্রথম ১০ লাখ টাকা করমুক্ত। পরের ১০ লাখে ৫ শতাংশ, তার পরের ১০ লাখে ১০ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে কর ধরা হয়। অন্যদিকে, সাধারণ করদাতাদের ক্ষেত্রে করহার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে মৎস্য খাতের এই করছাড় সুবিধা বাতিল করে এই আয়কে সাধারণ করহারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে প্রান্তিক মৎস্যচাষিদের সুরক্ষা দিতে ৫ লাখ টাকা বা সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখার প্রস্তাব থাকছে বলেও জানান তারা।