ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ২০%

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ায় ব্যাংক খাতে ডলার প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা ও নিষ্পত্তি, দুটোই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের—যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি খোলা হয়েছিল ৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের। নতুন বছরের প্রথম দুই মাসেই আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি খোলা কেন বেড়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, "চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে ডলারও তুলনামূলকভাবে বেশি আছে। এসব কারণে তারা আমদানি এলসি খোলা বাড়াতে পারছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে মাস হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের এই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "ফেব্রুয়ারিতে কমোডিটি আমদানি ইয়ার-অন-ইয়ার বেড়েছে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়ালসহ বেশ কিছু পণ্যের আমদানি আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে এলসি ওপেনিং বেড়েছে।"
মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়াল) বেশ কিছু খাতে আমদানি বেড়েছে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও পেট্রোলিয়াম আমদানিও কমেছে।
ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয় উল্লেখ করে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি অনেকদিন ধরেই কমছে। এটি ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ার মানে হলো, ইন্ডাস্ট্রিগুলো এখন উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগী নয়। ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রভাব ফেলছে এই প্রবণতা। মেশিনারিজ আমদানি কমায় এটা বোঝা যাচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে না।"
ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ২১ শতাংশ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের।
অর্থবছরের হিসাবে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি এলসি পেমেন্ট হয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে পেমেন্ট হয়েছিল ৪৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় অনেক ব্যাংক এখন ওভারডিউ পেমেন্ট ক্লিয়ার করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ওভারডিউ পেমেন্ট পরিশোধ করছে। ফলে এলসি নিষ্পত্তি বাড়ছে, যা স্বাভাবিক।"
সাইট এলসি খোলা বেড়ে যাওয়ায় পেমেন্টও বাড়ছে উল্লেখ করে অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার আরও বলেন, "গ্রাহকেরা এখন ডেফার্ড এলসি খোলায় কম আগ্রহী। তারা সাইট এলসি খুলছেন, ফলে আমাদের এলসি খোলার এক মাসের মধ্যেই পেমেন্ট ক্লিয়ার করতে হচ্ছে। এতে করে সামগ্রিক এলসি পেমেন্টের অঙ্ক বাড়ছে।"
খাতভিত্তিক আমদানি এলসি পেমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পেমেন্ট বেড়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। এছাড়া পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য পণ্যের আমদানির পেমেন্টও বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ২৫ শতাংশ পেমেন্ট কমেছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে। পাশাপাশি ইন্টারমিডিয়েট গুডস আমদানির পেমেন্ট কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "ব্যাংক খাতে ডেফার্ড এলসি কমে আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর পেমেন্টের চাপ কিছুটা কমেছে। এখন আমরা পেমেন্ট শিডিউল করে এলসি খুলছি, ফলে আমাদের ডেফার্ড পেমেন্টের চাপ আগের মতো নেই।"