ঋণ আদায়ে ‘এক্সিট পলিসি’ সহজ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এককালীন শোধের পরিমাণ কমিয়ে ৫%

আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধে এক্সিট সুবিধা প্রাপ্তির আবেদনের ক্ষেত্রে ডাউনপেমেন্ট বা এককালীন পরিশোধের পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেক করাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে খেলাপী বা অপরিশোধিত ঋণ আদায়ের এক্সিট পলিসি শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল সোমবার (১০ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো গ্রাহক ক্লাসিফাইডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরিশোধিত ঋণ পরিশোধে এক্সিট সুবিধা প্রাপ্তির আবেদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিলেই চলবে।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রাহককে এই সুবিধা পেতে ঋণের নূন্যতম ১০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হতো। গ্রাহকের আবেদনের ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংক তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণত যারা ব্যবসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা অন্য ব্যবসায়ে শিফট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের লোনগুলো ক্লিয়ার করতেই এক্সিট পলিসি করা হয়েছিল।
"এতদিন এক্সিট সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে ডাউনপেমেন্টের পারসেনন্টেজ অনেক বেশি ছিল। এরচেয়ে কম ডাউনপেমেন্ট দিয়ে একটি লোন রিশিডিউল করে ফেলা যায়। ফলে গ্রাহকেরা এক্সিট সুবিধা নিতে আগ্রহ পাচ্ছিলেন না।"
"ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ কমানোর জন্য আমরা অনুরোধ পেয়েছি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই নতুন ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে," বলেন তিনি।
নতুন সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, মূল ঋণ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে এক্সিট সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ঋণের পরিমাণ এরচেয়ে বেশি হলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের সিদ্ধান্ত নিতে পারতো ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের বোর্ডের ওপর চাপ কমাতেই ম্যানেজমেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, "একবার এক্সিট সুবিধা নিলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে ঋণের পুরো টাকা পরিশোধ করে ফেলতে হয়। এছাড়া, এসব ঋণ রিশিডিউল বা রিস্ট্র্যাকচার করা যায় না। একইসঙ্গে, পুরো ঋণ পরিশোধ হওয়ার আগে নতুন ঋণ নেওয়া যায় না বা খেলাপীর তালিকা থেকে বের হওয়া যায় না। ফলে এক্সিট সুবিধার অধীনে শুধুমাত্র তারাই ডাউনপেমেন্ট জমা দেন, যারা পুরোপুরি খেলাপীমুক্ত হতে চান।"
"কয়েক বছরের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় যেসব ব্যবসায়ী গ্রুপের ক্লাসিফাইড লোনের পরিমাণ অনেক বেশি, তারা সাধারণত এক্সিট সুবিধা নিতে আগ্রহী থাকেন না। এসব গ্রুপ লোন রিশিডিউল বা রিস্ট্র্যাকচার করতেই বেশি আগ্রহী," যোগ করেন তিনি।