Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
May 29, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, MAY 29, 2025
চা বাগানের ‘হাতবন্ধ আন্দোলন’ যেভাবে ৩০০ টাকা মজুরির আন্দোলন!

মতামত

পাভেল পার্থ
26 August, 2022, 07:55 pm
Last modified: 26 August, 2022, 07:56 pm

Related News

  • টানা ৫ মাস ধরে বেতন বন্ধ, রোববার সড়ক অবরোধে নামছেন সিলেটের চা শ্রমিকেরা
  • ৩ বছর পরপর ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের
  • তিন মাস ধরে মজুরি বন্ধ, কাজ নেই ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা শ্রমিকদের
  • বকেয়া বেতনের দাবিতে সিলেটে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি, উৎপাদনে ধস
  • প্রায় অর্ধেক খাতেই নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি হয় না: গবেষণা

চা বাগানের ‘হাতবন্ধ আন্দোলন’ যেভাবে ৩০০ টাকা মজুরির আন্দোলন!

চা বাগানে একের পর নির্মমতা, নিপীড়ন, অন্যায়, জবরদস্তি, দাসত্ব চলে। এসব নিয়ে আমরা কেন জানি কখনোই ‘রা’ করি না।
পাভেল পার্থ
26 August, 2022, 07:55 pm
Last modified: 26 August, 2022, 07:56 pm
ছবি: সংগৃহীত

সবেমাত্র প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে মামার বাড়িতে। তেলতেলে লম্বা বারান্দা, বিশাল এক রান্নাঘর, শানবাঁধানো পুকুর আর বেতের সোফাভর্তি সাজানো পোর্টিকো। 

কালারাম উড়িয়া নামে একজন কামলা খাটতো ওই বাড়িতে। একদিন কালারামের সাথে লুকিয়ে চলে যাই দূরের এক চা বাগানে। উদনাছড়ায়। 

দুপুর ঘনায়, কিন্তু কোনো খাবার দেয় না কেউ। সন্ধ্যায় রুটির সাথে এক থকথকে তরকারি জোগাড় হয়। আর শুরু হয় গান। অচিন ভাষার সেই গানের কোনো অর্থ না বুঝলেও নাড়িয়ে দিয়েছিল আমার অবুঝ শৈশব। 

অনেক পরে জেনেছিলাম ওই সময় চা বাগানে চলছিল 'হাতবন্ধ আন্দোলন'। মজুরি কম বলে কয়েক পয়সা মজুরি বাড়ানোর জন্য অনাহারে ছিল বাগানের পর বাগান। 

এরপর বড় হতে হতে বহুবার দেখেছি 'চা বাগানের মজুরি আন্দোলন'। আজও চা বাগানে এই আন্দোলন চলছে। দিনে মাত্র ৩০০ টাকা মজুরির জন্য। 

দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে একটা সংসার চলে কি না এটি এখন এক পাবলিক আলাপ-তর্ক। আন্দোলন এখন এক ত্রিমুখী ধারা তৈরি করেছে। 

বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এই মজুরি তর্কের এক ন্যায্য হিস্যা করবেন। আন্দোলনরত প্রধান ধারা প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশনে এসে ৩০০ টাকা মজুরির ঘোষণা দিলেই সবাই কাজে ফিরে যাবেন। 

এর ভেতর ২৫ টাকা বাড়িয়ে মজুরি ১৪৫ টাকার প্রস্তাব এসেছে এবং আন্দোলন স্থগিত করে আপাতত ১২০ টাকার মজুরিতে কাজে নিয়োগ করতে বলা হচ্ছে সবাইকে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতৃবৃন্দ এ বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনের প্রধান ধারা এই নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এ ঘটনাকে বড় নেতাদের 'আপোষ' হিসেবে আখ্যা দিয়ে এমন 'আপোষকামী' নেতাদের নানা বাগানে চা শ্রমিকেরা তিরস্কারও করছেন। 

আর তৃতীয় ধারাটি হলো নয়াউদারবাদী করপোরেট ধারা। যাকে সহজেই দুম করে আমরা 'মালিকপক্ষ' বলে ফেলি। 

চা বাগানের 'মালিকানা' নিঃসন্দেহে অপরাপর শিল্পের মালিকানার মতো নয়। এখানে পারিবারিক উত্তরাধিকারী বা শৌখিন উদ্যোক্তা আছেন, ফিনলে-ডানকান-ইউনিলিভারের মতো করপোরেট আছে, আবার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও আছে। 

তো তৃতীয় ধারাটি কেবল 'মালিক-শ্রমিক' দ্বন্দ্ব-সমীকরণের সাথে জড়িত নয়। নয়াউদারবাদী বাজার ও মুনাফা নিয়ন্ত্রণের রাজনীতির সাথে এর গভীর সম্পর্ক।

আর এই তৃতীয় পক্ষটিই প্রচার করছে 'আন্দোলনের মাধ্যমে একটি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে', 'চা পাতা তোলার ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের আন্দোলন করা ঠিক হচ্ছে না', 'শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়' ইত্যাদি। 

মজুরি বিষয়ে তৃতীয়পক্ষের মহামিথ্যা এজেন্ডা কেউ বিশ্বাস করছে না। চলতি আলাপখানি চা বাগানের চলমান আন্দোলনে একাত্ম হয়ে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবি করছে।   

৩০০ টাকা মজুরি আন্দোলন

চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নির্ধারণ বিষয়ে প্রতি দুই বছর পরপর চা শ্রমিকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন' এবং বাগান মালিকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ চা সংসদের' ভেতর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সনের ডিসেম্বরে। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ মাসেও কোনো নতুন চুক্তি হয়নি।

এক দুঃসহ করোনা মহামারিকাল আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোটা দুনিয়া আজ বিপর্যস্ত। জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম কিংবা ন্যূনতম বেঁচে থাকার প্রশ্ন আজ হুমকির মুখে। 

এই মজুরি নানা শর্তের শেকলে বন্দি। দিনে ন্যূনতম ২৩ কেজি চা পাতা তুলতে পারলে এই মজুরি পাওয়া যায়। আর এই নির্ধারণ সীমার নাম 'নিরিখ'। নিরিখের চেয়ে বেশি তুলতে পারলে প্রতি কেজির জন্য ৪ টাকা ২৫ পয়সা আর কম তুললে প্রতি কেজির জন্য কাটা হয় ৫ টাকা ২০ পয়সা। এই মজুরি ছাড়া আছে সাপ্তাহিক রেশন। একজন স্থায়ী শ্রমিক পুরুষ হলে তার পরিবার পাবে ৩ কেজি ২০০ গ্রাম আটা এবং শ্রমিক নারী হলে পাবে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম। মজুরি আর রেশনের পর কিছু স্থায়ী শ্রমিক পরিবার পায় ক্ষেতল্যান্ড জমি।

জীবাশ্ম জ্বালানির সংকট আর বৈশ্বিক বাজারের রাজনীতি রাষ্ট্রসমূহকে নানা নয়া সিদ্ধান্ত ও কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। অথচ এক চা বাগান প্রশ্নে আমরা নির্বিকার। রাষ্ট্র, করপোরেট, এজেন্সি, ক্রেতা-বিক্রেতা-ভোক্তা, মিডিয়া কি নাগরিক প্রতিক্রিয়া সকলেই। 

যদিও চা বাগান নিয়ে 'মূলধারার' এই প্রবল নিষ্ক্রিয়তা বা উপনিবেশিক ঝিমিয়ে পড়া নতুন কোনো প্রবণতা নয়, এটি ঐতিহাসিক। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা মজুরির জন্য রাস্তায় নামলে বা লকডাউনে ভিড়ের চাপে ফেরি পার হলে আমাদের ছিঁচকাদুনে নাগরিক প্রতিক্রিয়া কিছুটা হলেও নাকের জলে চোখের জলে 'সর্দি' তৈরি করে। কিন্তু চা বাগানে একের পর নির্মমতা, নিপীড়ন, অন্যায়, জবরদস্তি, দাসত্ব চলে। এসব নিয়ে আমরা কেন জানি কখনোই 'রা' করি না। এর একটা কারণ হতে পারে এই চা শ্রমিকদের গরিষ্ঠভাগই 'অবাঙালি', জনগণ। 

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা সংসদের ভেতর ২০২২ সনের জুন মাসে একটি বৈঠক হয়। এই বৈঠকে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয় চা শ্রমিক ইউনিয়ন। কিন্তু চা সংসদ মাত্র ১৪ টাকা বাড়িয়ে দৈনিক ১৩৪ টাকা নতুন মজুরি প্রস্তাব করে। 

২০২২ সনের ৩ আগস্ট চা শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য মালিকপক্ষকে সাত দিনের আলটিমেটাম দেন। কিন্তু মালিকপক্ষ চা শ্রমিকদের এই দীর্ঘ সময়ের দাবিকে কোনো গুরুত্বই দেয় না। বাধ্য হয়ে চা বাগানে আবারো আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হন চা শ্রমিকেরা। 

৯ থেকে ১২ আগস্ট ২০২২ টানা চারদিন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবরিতি ও ধর্মঘট পালিত হয়। ১১ আগস্ট বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক ডাকে, কিন্তু সেখানে মালিকপক্ষের কেউ না যাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ বৈঠক শেষ হয়। 

বাধ্য হয়ে আবারো ১৩ আগস্ট থেকে ধর্মঘট শুরু করেন ২৩১টি চা বাগানের চা শ্রমিকেরা। ১৪ আগস্ট মৌলভীবাজারসহ দেশের প্রায় সব চা বাগানে কর্মবরিতির পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল ও সড়কপথ অবরোধ করে শ্রমিকেরা। 

পরবর্তীতে ১৬ আগস্ট থেকে ফের কর্মবরিত ও বিক্ষোভ সমাবেশ চলতে থাকে। ১৬ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিপ্তরের কার্যালয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক বৈঠক করেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সাতটি ভ্যালির সভাপতিসহ প্রায় ৪০ জন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন। 

২১ আগস্ট ২০২২ শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে শ্রম অধিপ্তরের বৈঠক হয়। এই বৈঠকে মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার প্রস্তাব কিছু শীর্ষ নেতা মেনে নেন। 

২২ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে আরেক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেবেন বলে যৌথ বিবৃতিতে সই করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু শীর্ষ নেতা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি সাধারণ চা শ্রমিকেরা। 

২২ আগস্ট সিলেট ভ্যালির ৪টি বাগানের কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দেন। ২৩ আগস্ট সিলেট গলফ ক্লাবে সিলেট ভ্যালির ২৩টি চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সাথে দিনভর আলোচনা করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু নেতা। 

কিন্তু চা শ্রমিকরা আবারো ২৩ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি ও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। শ্রম দপ্তর আবারো ২৮ আগস্ট শ্রমিক-মালিক উভয়পক্ষের সাথে একটি সমঝোতা বৈঠকের কথা জানিয়েছে।

চা শ্রমিকের আহামরি সুখ!

২০০৬ সনে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল ৩০ টাকা। ২০০৮ সনে একজন চা শ্রমিকের মজুরি ছিল দৈনিক ৩২ টাকা। ২০০৯ সনে নিম্নতম মজুরি বোর্ড সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে ৪৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। ২০১৫ সনে দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা হলেও অনেক বাগানে দেয়া হত ৭৯ টাকা। বর্তমানে এই মজুরি ১২০ টাকা। 

কিন্তু কীভাবে এই মজুরি নির্ধারিত হয় এবং এটি কি সবার জন্য একইরকম? 

একজন স্থায়ী শ্রমিক চা বাগানে মাত্র এক কেয়ার (১ একর=২.৪৭ কেয়ার) ক্ষেতল্যান্ড জমিতে চাষাবাদের এই সুযোগ পান। আমন ও বোরো মওসুমে ধান আবাদ ছাড়াও কিছু মৌসুমি শাকসবজি ফলে এসব জমিনে। এক কেয়ার জমির জন্য বরাদ্দকৃত রেশন থেকে চা বাগান কর্তৃপক্ষে বছরে ৮০ কেজি চাল বা গম কর্তন করে। যদিও পরিসংখ্যান বলে, দেশে মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ ০.২৮ একর। এছাড়া শ্রমিকেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে গাদাগাদি করে থাকার জন্য 'লেবার লাইনে' চৌদ্দ হাতের একখানি ঘর পান।

১৯৬২ সনের 'দ্য টি প্লান্টেশন লেবার অর্ডিন্যান্স' এবং ১৯৭৭ সনের 'দ্য টি প্লান্টেশন লেবার রুলস' দ্বারা চা শ্রমিকদের 'কল্যাণ' নিয়ন্ত্রিত হতো। পরবর্তীতে ২০০৬ সনের বাংলাদেশ শ্রম আইনে চা বাগানকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। 

চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারিত হয় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশীয় চা সংসদের ভেতর সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে। সর্বশেষ চুক্তিপত্রটি কার্যকর হয় ২০০৫ সনে এবং ২০০৭ সনে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও দেশে জরুরি অবস্থার কারণে তখন চুক্তি হয়নি। 

প্রতি পাঁচ বছর পরপর মজুরি বোর্ড গঠন করে চা শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১১ বছর পর করোনাকালে গেজেট আকারে চা শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো প্রস্তাব করা হয়। গেজেটে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার চা বাগানগুলোকে এ, বি ও সি শ্রেণিতে এবং চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও অন্যান্য জেলার চা বাগানকে ১, ২ ও ৩ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে। বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার কেজি বা তারচেয়ে বেশি চা উৎপাদন করে এমন বাগান এ শ্রেণি এবং ১,০৮,০০০ কেজির কম উৎপাদন করে এমন চা বাগানগুলো সি শ্রেণির। 

এ শ্রেণির বাগানের স্থায়ী এবং সাময়িক/ক্যাজুয়াল শ্রমিকের জন্য দৈনিক ১২০ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ১১৮ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের জন্য ১১৭ টাকা প্রস্তাব করে মজুরি বোর্ড। 

তবে এই মজুরি নানা শর্তের শেকলে বন্দি। দিনে ন্যূনতম ২৩ কেজি চা পাতা তুলতে পারলে এই মজুরি পাওয়া যায়। আর এই নির্ধারণ সীমার নাম 'নিরিখ'। নিরিখের চেয়ে বেশি তুলতে পারলে প্রতি কেজির জন্য ৪ টাকা ২৫ পয়সা আর কম তুললে প্রতি কেজির জন্য কাটা হয় ৫ টাকা ২০ পয়সা। 

এই মজুরি ছাড়া আছে সাপ্তাহিক রেশন। একজন স্থায়ী শ্রমিক পুরুষ হলে তার পরিবার পাবে ৩ কেজি ২০০ গ্রাম আটা এবং শ্রমিক নারী হলে পাবে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম। মজুরি আর রেশনের পর কিছু স্থায়ী শ্রমিক পরিবার পায় ক্ষেতল্যান্ড জমি। 

একজন স্থায়ী শ্রমিক চা বাগানে মাত্র এক কেয়ার (১ একর=২.৪৭ কেয়ার) ক্ষেতল্যান্ড জমিতে চাষাবাদের এই সুযোগ পান। আমন ও বোরো মওসুমে ধান আবাদ ছাড়াও কিছু মৌসুমি শাকসবজি ফলে এসব জমিনে। এক কেয়ার জমির জন্য বরাদ্দকৃত রেশন থেকে চা বাগান কর্তৃপক্ষে বছরে ৮০ কেজি চাল বা গম কর্তন করে। যদিও পরিসংখ্যান বলে, দেশে মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ ০.২৮ একর। এছাড়া শ্রমিকেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে গাদাগাদি করে থাকার জন্য 'লেবার লাইনে' চৌদ্দ হাতের একখানি ঘর পান। 

মালিকপক্ষের সত্যগোপন

বাংলাদেশের চা উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে দেশে চা বাগান ১৬৭টি। ১৬৭ বছর ধরে চা উৎপাদন করেও চা শ্রমিকের মজুরি ১৬৭ টাকা পর্যন্ত হয়নি। 

চলমান ৩০০ টাকা মজুরির আন্দোলনকে অস্বীকার করে মালিকপক্ষ গণমাধ্যমে বলছেন, চা শ্রমিকেরা মজুরি ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে দৈনিক ৪০২ টাকা আয় করেন। 

২০০৬ সনের ৪২ নং আইন হিসেবে দেশে গৃহীত হয় 'শ্রম আইন ২০০৬'। উক্ত আইন অনুযায়ী চা বাগানসহ দেশের শ্রমিকের 'মজুরীর' সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্র। আজ যখন চা বাগানে এত কম মজুরি কেন, এই প্রশ্ন ওঠেছে দেশজুড়ে এবং পক্ষ-বিপক্ষ সকল মানুষ বলছেন, '১২০ টাকা দিয়ে এই দিনে কীভাবে হয়'?

কিন্তু মালিকপক্ষ তারপরও ভুল অঙ্কের যোগফল টেনে সাফাই গাইছেন, চা বাগানে শ্রমিকের মজুরি কম নয়। মানে চা বাগানের মালিকেরা 'মানবিক' এবং তারা শ্রমিকদের কমেরও কম মজুরি দেন না। 

কিন্তু মালিকপক্ষ যেসব হিসাবকে শ্রমিকের মজুরির সাথে যোগ করেছেন তা কোনোভাবেই 'মজুরি' নয়, এক্ষেত্রে মালিকপক্ষের ৪০২ টাকার হিসাব শ্রম আইনের সংজ্ঞাকে লঙ্ঘন করে। 

শ্রম আইনের ২(৪৫) ধারায় উল্লেখ আছে, বাসস্থান, আলো, পানি, চিকিৎসা সুবিধা, অন্য কোনো সুবিধা, অবসর ভাতা, ভ্রমণ ভাতা বা ভবিষ্যত তহবিল ইত্যাদি মালিক কর্তৃক প্রদেয় 'মজুরির টাকায়' অর্ন্তভুক্ত হবে না। 

১০ লাখ চা বাগানির সাথে মজুরি নিয়ে আজ যখন এক পাবলিক তর্ক ওঠেছে তখন মজুরি বিষয়ে কোনো বক্তব্যের ক্ষেত্রে চা বাগানের মালিকপক্ষকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতিকে মান্য করতে হবে।

উদোর পিণ্ডি কেন চা শ্রমিকের ঘাড়ে?

চা শিল্পের উদ্যোক্তা ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি গণমাধ্যমে বলেছেন, ...৩০০ টাকা মজুরি দিতে গেলে একটি বাগানও টিকবে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ২৫ টাকা মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গেলেও উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। 

একটি সিন্ডিকেট চায়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তাই চায়ের দাম বাড়িয়ে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু এইরকমের কোনো সিন্ডিকেটের জন্য কেন চা শ্রমিকের ভোগান্তি হবে? কেন তার মজুরি বাড়বে না? এই সিন্ডিকেট কারা বহাল রাখছে? এর দেখভালের দায়িত্ব কার? 

চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন...চায়ের গুণগত মান কমে যাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, রপ্তানি কমে যাওয়া, ভারত থেকে অবৈধভাবে চা আমদানিসহ নানা কারণে দেশের চা শিল্প ঝুঁকিতে আছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবি পূরণ করতে গেলে চা শিল্প আরো সংকটে পড়বে বলে তিনি জানান। 

মালিকপক্ষের এই ভাষ্য কোনোভাবেই চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত নয়। চা শিল্পের ঝুঁকি বাড়বে যদি শ্রমিক অসুস্থ ও অনাহারী থাকে। নিরানন্দ আর হতাশা ঘিরে থাকে চারপাশ। 

বহুজাতিক বাজার, মুনাফার রাজনীতি আর দখলিপনার সংস্কৃতিকে প্রশ্ন না করে বারবার কেন চা শ্রমিকের ঘাড়ে উদোর পিণ্ডি চাপানোর চেষ্টা চলে? স্মরণে রাখা জরুরি, করোনা মহামারিতে দেশ-দুনিয়া লকডাউন হলেও চা বাগান নির্ঘুম ছিল। বাংলাদেশ চা সংসদের হিসাবে ২০২১ সনে দেশে রেকর্ড ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয় এবং ২০১৯ সনে হয় ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। 

জীবন দিয়ে চা শিল্পকে চাঙা রাখা চা শ্রমিকের কোনো স্বীকৃতি ও মর্যাদা এখনো নিশ্চিত করেনি রাষ্ট্র। চলমান ৩০০ টাকা মজুরি আন্দোলন সফল হোক। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

পাভেল পার্থ | অলংকরণ: টিবিএস

  • পাভেল পার্থ: গবেষক ও লেখক

Related Topics

টপ নিউজ

চা শ্রমিক / চা শ্রমিক আন্দোলন / মজুরি বৃদ্ধি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প
  • মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের ধাক্কা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে
  • ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ
  • ‘সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে’: তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা আব্বাস
  • ‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

Related News

  • টানা ৫ মাস ধরে বেতন বন্ধ, রোববার সড়ক অবরোধে নামছেন সিলেটের চা শ্রমিকেরা
  • ৩ বছর পরপর ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের
  • তিন মাস ধরে মজুরি বন্ধ, কাজ নেই ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা শ্রমিকদের
  • বকেয়া বেতনের দাবিতে সিলেটে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি, উৎপাদনে ধস
  • প্রায় অর্ধেক খাতেই নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি হয় না: গবেষণা

Most Read

1
বাংলাদেশ

আন্তঃনগর ট্রেনে আরও বেশি যাত্রাবিরতি দেওয়ার চাপে রেলওয়ে

2
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প

3
অর্থনীতি

মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হারের ধাক্কা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে

4
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ

5
বাংলাদেশ

‘সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে’: তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা আব্বাস

6
বাংলাদেশ

‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net