পোকেমন সিরিজ আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর টিকে থাকবে!

পোকেমন হল দ্য পোকেমন কোম্পানির তৈরি করা একটি গেম। এর জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তীতে এটি নিয়ে তৈরি করা হয় অ্যানিমেটেড সিরিজ এবং এ সিরিজও পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পোকেমন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, এ সিরিজে নতুনত্ব আনতে পারলে সিরিজটি আরও ৫০ বছর টিকে থাকতে পারবে। খবর বিবিসির।
১৯৯৬ সালে নিনটেন্ডোর গেম বয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা এই ভিডিও গেম এখন সিনেমা, টেলিভিশন ও খেলনার জগতে ছড়িয়ে বিশ্বের অন্যতম লাভজনক মিডিয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিতে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এর ট্রেডিং কার্ড গেম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এর ফলে দখলদার ও প্রতারণার ঘটনাও বেড়েছে।
১৯৯৮ সাল থেকে কোম্পানির দায়িত্বে থাকা সিইও সুনেকাজু ইশিহারা বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এর সফলতার রহস্য, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সিরিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন।
পোকেমন দিবসের ঘোষণা
পোকেমন দিবস হলো বার্ষিক এক আয়োজন, যেখানে আসন্ন রিলিজ, আপগ্রেড এবং বিভিন্ন ইভেন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ভক্তরা নিনটেন্ডো সুইচের আসন্ন গেম 'পোকেমন লিজেন্ডস: জেড-এ' এবং জনপ্রিয় ট্রেডিং কার্ড গেমের আপডেটের খবরের আশায় রয়েছেন।
ইভেন্টের আগে খুব বেশি তথ্য দিতে না চাইলেও মি. ইশিহারা জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো 'বাস্তব ও ভার্চুয়াল, উভয় জগতকে সমৃদ্ধ করা'।
পোকেমন গো তেমনই একটি সফল মোবাইল গেমের চমৎকার উদাহরণ। এখানে ডিভাইসের জিপিএস ব্যবহার করে বাস্তব জগতে পোকেমন দেখা যায়।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি, এটিই পোকেমনের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং এমন নতুন ধারণা নিয়ে আসাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা পরবর্তী ধাপে কী অর্জন করতে চাই তা নিয়ে ভাবি।"

পোকেমন স্কাল্পার, নকল এবং পালওয়ার্ল্ড
দীর্ঘদিনের পোকেমন ভক্তদের মধ্যে এখন অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো স্ক্যালপারদের কার্যক্রম।
সংগ্রহযোগ্য কার্ড গেমের জনপ্রিয়তা আবারও বাড়ার পর থেকে অনেক বিক্রেতা নতুন কার্ড প্যাক কিনে নিচ্ছেন, যাতে তারা বিরল ও মূল্যবান কার্ড পেতে পারেন।
ইউটিউবার লোগান পল যখন পোকেমন সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি কার্ড কিনতে ৫.৩ মিলিয়ন ডলার (৩.৯ মিলিয়ন পাউন্ড) খরচ করেন, তখন অনেকের নজর এই বাজারের লাভজনক দিকটির দিকে যায়।
গেমিং কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত পণ্য বিক্রির বাজার নিয়ে সমস্যায় রয়েছে এবং মি. ইশিহারা বলেন, "এটি নতুন পণ্য বিক্রিতে বাধা সৃষ্টি করে।"
তিনি আরও বলেন, "যখন ব্যবহৃত পণ্যের বাজার শুধু বিরল হওয়ার কারণে বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে, তখন তা সমস্যার সৃষ্টি করে। কারণ এটি আমাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করে।"
ভক্তরা পরামর্শ দিয়েছেন যে পোকেমন কোম্পানি দুষ্প্রাপ্য বা সীমিত সংস্করণের পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে মি. ইশিহারা বলেন, পুনঃবিক্রির বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাদের করার মতো খুব বেশি কিছু নেই।
তিনি বলেন, "এই পণ্যগুলোকে মূল্যবান মনে করা হয় কারণ সেগুলো বিরল বা প্রাচীন হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই আর আমরা বলতে পারি না যে এগুলো মূল্যবান নয়।"
নকল পণ্য সম্পর্কিত বিষয়ে মি. ইশিহারা আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি বলেন, "কোম্পানির আইন বিষয়ক দল শুরু থেকেই নকল ও ক্লোনের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে লড়াই করে আসছে।"
সম্প্রতি, তারা একটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে জয় লাভ করেছে, যেখানে একটি চীনা কোম্পানির তৈরি নকল মোবাইল অ্যাপের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
এছাড়া, চলতি বছর পোকেমন কোম্পানি নিনটেন্ডোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পালওয়ার্ল্ড নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এটি একটি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার সারভাইভাল গেম যা 'বন্দুকসহ পোকেমন' হিসেবে পরিচিত।
তারা অভিযোগ করেছে যে, ডেভেলপার পকেটপেয়ার তাদের পেটেন্ট লঙ্ঘন করেছে, তবে কোম্পানিটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পোকেমনের সাফল্যের রহস্য
পোকেমন শুধু ভিডিও গেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এনিমে, কার্ড গেম, সিনেমা ও খেলনার জগতে প্রসারিত হয়েছে, যা নতুন ভক্তদের এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত রেখেছে।
মি. ইশিহারা বলেন, এখন পোকেমন ভক্তরা বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে বিস্তৃত এবং এর সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ হলো পোকেমনে এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।"
গত সপ্তাহান্তে, লন্ডনের এক্সেল সেন্টারে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান পোকেমন ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রায় ১৩ হাজার ভক্ত অংশ নেন।
এটি মি. ইশিহারার বক্তব্যকে আরও দৃঢ় করে যে, মানুষ বিভিন্ন উপায়ে পোকেমন জগতের অংশ হয়ে উঠেছে।
২৫ বছর বয়সী জাস্টিন ও ২৮ বছর বয়সী মারিনা পোকেমন ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে টিম রকেটের পোশাক পরে হাজির হন। তারা বিবিসি নিউজকে জানান, ছোটবেলায় অ্যানিমেটেড টিভি শো দেখে পোকেমনের প্রতি তাদের ভালোবাসা জন্মেছিল।
জাস্টিন বলেন, "আমি সব ডিজাইনগুলো, সব ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রগুলো ভালোবাসতাম। তারা সত্যিই অনেক সুন্দর ছিল।"
মারিনা জানান, সরাসরি ইভেন্টগুলো এখন তার জন্য অন্য ভক্তদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, "আমি সবসময় কনভেনশন ও এ ধরনের ইভেন্টে যেতে চাইতাম। এখানে এসে নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারা ও নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সত্যিই আশীর্বাদের মতো।"

আমাদের একটাই লক্ষ্য... পোকেমন
পোকেমন কোম্পানি অনন্য। কারণ এটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
অন্যান্য সুপরিচিত জাপানি ব্র্যান্ড, যেমন নিনটেন্ডো এবং হ্যালো কিটি নির্মাতা সানরিও, পাবলিকলি ট্রেড হয় এবং শেয়ারহোল্ডারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
তবে মিস্টার ইশিহারা বিশ্বাস করেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তার কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই পুরো মনোযোগ দিতে পারে।
তিনি বলেন, "পোকেমন কোম্পানিতে আমরা শুধু পোকেমন নিয়েই কাজ করি।"
অ্যাশ ও পিকাচু এখন কোথায়?
২০২৩ সালের শেষ দিকে, দীর্ঘদিনের নায়ক অ্যাশ কেচাম এবং তার প্রিয় বন্ধু পিকাচু পোকেমন অ্যানিমেটেড সিরিজ থেকে বিদায় নেয়।
তাদের ছাড়া সিরিজটি চলতে থাকলেও, মিস্টার ইশিহারার কাছে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নগুলোর একটি হলো, 'তারা এখন কী করছে?'

তিনি বলেন, "যদিও টিভি ক্যামেরা তাদের অনুসরণ করছে না, তবুও অ্যাশের যাত্রা চলছে, আর তার সঙ্গী পিকাচুও রয়েছে তার পাশেই।"
আগামী বছর পোকেমন ফ্র্যাঞ্চাইজির ৩০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে, আর বিশেষ আয়োজন নিয়ে গুঞ্জন ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে।
মূল গেম বয় গেমগুলোর রিমেক বা পুনর্মুক্তি অনেক ভক্তেরই প্রত্যাশার শীর্ষে রয়েছে।
এ বিষয়ে ইশিহারা এখনই বেশি কিছু বলতে চান না, তবে তিনি বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতকে সংযুক্ত রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে চান।
তিনি বলেন, "যদি আমরা আমাদের লক্ষ্য বজায় রেখে এগিয়ে যাই, তাহলে পোকেমন হয়ত ৫০ কিংবা ১০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "কিন্তু যদি আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগি এবং সময়ের স্রোতে ভেসে যেতে থাকি, তখনই পোকেমন পতনের মুখে পড়বে।"