স্বস্তি ফিরেছে তেঁতুলতলায়

দীর্ঘ তিন মাস নানা নাটকীয়তার পর মাঠে থানা ভবন নির্মাণ না করার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরে এসেছে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ এলাকায়। তবে জায়গাটি পুলিশের মালিকানায় থাকায় এটি মুক্ত করে দেয়ার দাবি এখনো জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার এখানে থানা ভবন না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর রাতেই মাঠ থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান নির্মাণ সামগ্রী ও চেয়ারসহ তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র।
শুক্রবার দুপরের পর মাঠ অনেকটাই ফাঁকা থাকলেও বিকেলের দিকে স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলতে আসে। সঙ্গে অভিবাবকদেরও হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে।
তবে পুলিশের তোলা দেয়াল ভেঙে ফেলা হবে কি না, এ বিষয়ে জানতে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সৈয়দা রত্না টিবিএসকে বলেন, 'আমি এতদিন স্থানীয়দের নিয়ে আন্দোলন করেছি। এরপর আমার সাথে সবাই এক হয়েছিল। এখন মাঠটি সবার। মাঠটি নিয়ে কার কী প্রত্যাশা সেটা সবাই বলবে। এখন শুধু আমি একা বলতে চাই না।'
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ২০ কাঠা পরিমাণের অব্যবহৃত এই জায়গাটি প্রায় ৫০ বছর ধরে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব এবং খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ২০২০ সালে স্থানটি থানার জন্য নির্ধারণের পর এলাকাবাসী প্রতিবাদ শুরু করে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মাঠটিতে কাঁটাতার দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কলাবাগান থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য রুটিন করে মাঠ পাহারা দিতে শুরু করেন।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শিশুরা খেলতে গেলে তাদের কান ধরে ওঠবস করান তারা। সেইসঙ্গে তারা যেন আর কখনও ওই মাঠে খেলতে না যায় সেজন্য শিশুদের ভয় দেখানো হয়। এ ঘটনায় কলাবাগান থানার ৪ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর থেকেই স্থানীয়রা জায়গাটি রক্ষার দাবিতে সৈয়দা রত্নার নেতৃত্বে 'তেঁতুলতলা মাঠ আমাদের প্রাণের দাবী' ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত রোববার প্রতিবাদে নামলে কিশোর ছেলেসহ ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয় রত্নাকে। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এরপর গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা অনেকটা ঢিলেঢালা অবস্থানে ছিল। কিন্ত এরপর আরও গতি নিয়ে চলছিল সেই মাঠে ভবন নির্মাণের কাজ। বুধবার মাঠের একাংশে পিলারের কাজ শেষ করে ইটের দেয়াল নির্মাণের কাজ চলতে থাকে।
এমন পরিস্থিতে নড়েচড়ে বসেন মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্থানীয়রা। তাদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক বসেন তিন বিশিষ্ট নাগরিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন জানান। তবে ওই দিন রাতেই মাঠের এক অংশে দেয়াল তোলে পুলিশ।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মাঠটি এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত রাখার ঘোষণা আসে।