এখনও দোকানী আর হকারদের দখলে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা যেতে রাস্তার পাশেই আছে ঢাকা নগর পরিবহনের একটি বাস স্টপেজ। সামনেই রাস্তায় লেখা রয়েছে 'বাস থামার স্থান'। কিন্তু এ বাস স্টপেজের যাত্রী ছাউনির দু'পাশেই রাস্তার উপর বসানো হয় বাজার। যা রাস্তাসহ ফুটপাতের অধিকাংশই দখল করে নেয়। ফলে বাসে যাত্রী ওঠাতে ও নামাতে রাস্তার ওপরেই থামতে হয়।
এ স্টপেজের একটু সামনেই রাস্তার উপরে ফেলে রাখা হয় এ এলাকার বর্জ্য। খোলা কন্টেইনারে উন্মুক্ত অবস্থায়ই পড়ে থাকে বর্জ্য। দিনভর এ বর্জ্যের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে চলাচল করতে হয় পথচারীদের। শুধু তাই নয়, রাস্তার অপর পাশে (উত্তর পাশে) সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় লেগুনা। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সময়ে চালানো অভিযানে বাজার তুলে দেওয়া হয়, আবারও কিছুদিন পর তা বসে যায়। ফলে রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাই দখল করে আছে এ অস্থায়ী বাজার এবং লেগুনা পার্কিং।
রাস্তার উপরে বাজারের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে এ এলাকায় চলাচলকারী পথচারী এবং বাসে ওঠা-নামা করা যাত্রীরা। বাসের যাত্রীদের বাধ্য হয়ে নামতে হচ্ছে রাস্তার মধ্যে। নানাবিধ এ সমস্যা নিয়ে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।
অবৈধভাবে বসানো দোকানের মালিকরা বলছেন, তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা দিয়ে এ রাস্তার উপর দোকান বসান। স্থানীয় দলীয় নেতাদের পরিচয় দিয়ে ৩/৪ জন এ টাকা তুলে বলে জানা যায়।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে দোকানগুলো ভেঙ্গে দিলেও আবার বসান তারা। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন সময় বৈঠক করলেও এ বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান তারা।
রবিবার মোহাম্মদপুরের এ রাস্তায় সরেজমিনে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে বসিলায় যেতে রাস্তায় প্রায় ৪০০ মিটার পর্যন্ত অন্তত ৩০টি অস্থায়ী দোকান বসানো। এগুলোর মধ্যে রাস্তার ভ্যানে করেও পণ্য বিক্রি করছেন অনেকে। ফুটপাতের অনেকটা জুড়েও রাখা হয়েছে দোকানগুলোর পণ্য। ফলে পথচারীদের অধিকাংশই ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মধ্য দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন। রাস্তার উত্তর পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে লেগুনা। যেগুলো চলাচল করে আগারগাঁও ৬০ ফিটের রাস্তায়। এর পাশেই আরেক সারিতে রাখা হচ্ছে এ রুটে চলাচল করা বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস।
এ রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী হাবিবা বেগম টিবিএসকে বলেন, "রাস্তায় দোকান থাকায় বাসে উঠতে ও নামতে তাড়াহুড়া করতে হয়। ফলে আতঙ্ক নিয়েই চলাচল করতে হয়। গত সপ্তাহে দেখলাম দুদিন এখানে কোনো দোকান ছিল না, এখন দেখছি আবার সেই আগের পরিস্থিতি। রাস্তা চওড়া হলেও ব্যবহার করতে পারছি না আমরা।"
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম টিবিএসকে বলেন, "একদিকে রাস্তার মধ্যে বাজার আর বর্জ্যের স্তুপ অন্যদিকে পার্কিং করে রাখা লেগুনা আমাদের চলাচলে বেশ বিঘ্ন ঘটায়। মেয়র এলাকায় আসলেই সব খালি হয়ে যায়, চলে গেলে আবার সেই আগের মতো অবস্থা। শুধু আমাদের মতো মানুষের এগুলোর জন্য চলাচলে সমস্যায় পড়তে হয়।"
গত ২৭ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত বসিলা রোড দখল করে রাখা ফল, সবজি ও চায়ের দোকানগুলোর উচ্ছেদ করা হয়। এতে সড়কের ধারে বসানো অবৈধ শতাধিক দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ প্রায় দুই লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করে উত্তর সিটি। এর কাছের বসিলামুখী রাস্তাটির দোকানীরা তখন তাদের দোকান সরিয়ে রাস্তা খালি করে দিলেও তার পরের দিন থেকেই আবারও বসছে সেখানে।
অবৈধভাবে বসানো সবজিদোকানী মো. মাহবুব টিবিএসকে বলেন, "আমাদের বাধ্য হয়ে এখানে বসতে হচ্ছে। আর কোথাও আমাদের জন্য বাজার নির্ধারণ করে দিলে সুবিধা হতো। আর এখানে রাস্তা খরচও বেশি।"
ভ্যানে কাপড় বিক্রেতা শামীম টিবিএসকে বলেন, "এখানে বিকালের দিকে বসি। সবাই বসে তাই আমিও বিক্রি করি। আমাদের জন্য কোথাও তো দোকান বসানোর স্থান নির্ধারণ করা নেই। তুলে দিলে আবার উঠে যাই।"
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকটি দোকানের মালিক টিবিএসকে বলেন, "এ দোকানগুলো থেকে দিনে ২/৩ জনে টাকা তুলে। দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হয় তাদের। শুধু তাই নয়, কোনোদিন দোকান বন্ধ রাখলেও নির্ধারিত টাকা দিতে হয় তাদের।"
নগর পরিবহনের কাউন্টারম্যান মো. ইমরান হোসেন টিবিএসকে বলেন, যাত্রীদের রাস্তার মধ্যে গিয়ে বাসে উঠতে হয়, যেটা অতিরিক্ত ভোগান্তি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আমরা বিভিন্ন সময়ে দোকানগুলো ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে তুলে দেই কিন্তু তারা আবারও এসে বসে। সাধারণ মানুষ যদি তাদের দোকান থেকে কেনাকাটা না করে তবেই তাদের দমানো সম্ভব। এছাড়া তাদের স্থায়ীভাবে সরানো যাচ্ছে না।"
তাদের থেকে টাকা কি সিটি কর্পোরেশনের লোকজন তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সিটি কর্পোরেশনের কেউ তাদের থেকে টাকা তুলছে না। হয়তো দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু লোকজন চাঁদাবাজি করছে, তবে কেউই আমার কাছে এসে অভিযোগ দেয়নি। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি কেউ চাঁদাবাজি করলে সরাসরি পুলিশকে জানাতে। দরকার হলে আমি তাদের সহযোগিতা করবো।"
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আমরা একদিক থেকে অবৈধ দোকান তুলে দিলে অন্যদিক থেকে আবার বসে। এগুলো সমাধানে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেছি কিন্তু তেমন সমাধান হয়নি। তাই বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করি কাউকে না জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার। এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। বেশি ভূমিকা থাকা দরকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।"
