জামিনে বেরিয়ে লাপাত্তা শীর্ষ দুই সন্ত্রাসী ‘পিচ্চি’ হেলাল ও টিটন

কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল, ওরফে পিচ্চি হেলাল ও খন্দকার নাঈম আহমেদ, ওরফে টিটন পালিয়ে গেছেন।
আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে এমন শর্তে জামিন পেলেও মুক্তির পর আর আদালতে হাজিরা দিতে যাননি তারা।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিচারিক আদালতে শীর্ষ দুই সন্ত্রাসীর হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা হাজিরা দিতে যাননি। আদালত ওইদিনই তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এছাড়া, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করতে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তর এ বিষয়ে এক চিঠিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে বলেছে। একইসঙ্গে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ অফিসকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, "এই দেশে সন্ত্রাসীদের জন্য জায়গা হবে না। জামিনে কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।"
তবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে কীভাবে তাদের আনা হবে, তা বলতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সন্ত্রাসীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, জামিনে মুক্তি পাওয়া একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে এই দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ৬ জন জামিনে মুক্তি পান। তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন।
জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন—মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন।
এছাড়া খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পান।
পুলিশ সূত্র বলছে, প্রায় দুই যুগ পর জামিনে বের হওয়া পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে ওই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার 'দখল' নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ওই ঘটনা ঘটে। এছাড়াও, মুক্তি পাওয়া অন্যদের নামে চাঁদাবাজি, জবরদখলের অভিযোগ ওঠে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কীভাবে জামিন পাচ্ছেন—এ বিষয়ে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বড় অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করত। সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসেন। আবার বের হওয়ার পর তাদের ওপর কোনো নজরদারি নেই।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কার্যক্রম ও তাদের ওপরে পুলিশের আদৌ কোনো নজরদারি আছে কিনা—জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাদ আলী বলেন, "শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। আদালত কর্তৃক জামিনে জেল থেকে বের হয়েছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলের আবেদন করবে ডিএমপি।"
অপরাধ নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, "জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা আবার পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক সচল করছে কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।"
"তা নাহলে এই দুর্বল পুলিশি ব্যবস্থার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তার আগেই তাদের (সন্ত্রাসীদের) আইনের আওতায় আনতে হবে," যোগ করেন তিনি।