'নতুন সংবিধান, গণপরিষদ নির্বাচন’: আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এনসিপির শীর্ষ নেতারা যা বললেন

গণঅভ্যুত্থানের সাত মাস পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন আখতার হোসেন।
অনুষ্ঠানে ঐক্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সহাবস্থান ও সুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা
আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা: নাহিদ
বাংলাদেশে ভারত-পাকিস্তানপন্থীর কোনো ঠাঁই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই হবে হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বির্নিমাণ করব। আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের 'তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প' স্লোগানটি তুলে ধরে বলেন নাহিদ ইসলাম বলেন, বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ। আজকের মঞ্চ থেকে শপথ, বাংলাদেশকে বিভাজিত করা যাবে না।
পরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণাপত্র পাঠকালে বলেন, 'নতুন বাংলাদেশ গড়ায় আমরা প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে শপথ করি, ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে যাই। আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ—আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক অধরা কোনো স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা!'
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ নতুন সংবিধান দিয়ে পরিচালনা হবে, এজন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি নতুন দলের পক্ষ থেকে।
গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি আখতার হোসেনের
তিনি দলের যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক পদে ২০টিরও বেশি নাম ঘোষণা করে জানান, এটি আংশিক কমিটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জানানো হবে।
তিনি বলেন, 'আগামীর বাংলাদেশ নতুন সংবিধান দিয়ে পরিচালিত হবে। এজন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি নতুন দলের পক্ষ থেকে।'
প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের তেজদীপ্ত চেতনার মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব: হাসনাত
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'দেড় দশক আওয়ামী জাহেলিয়াতে ছিল বিচারহীনতার সংস্কৃতি। স্পষ্ট বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলা হয়েছে। শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালানো হয়েছে। দিনের ভোট রাতে চালুর সংস্কৃতি শুরু হয়, ডামি ভোট হয়।'
তিনি বলেন, 'জাতীয় সংসদে কে যাবে, সেটা নির্ধারণ করবে খেটে খাওয়া জনতা, এই ভূখণ্ডের মানুষ। আমরা ন্যাশন ডেভেলপ করতে পারি নাই, স্বাধীন বিচার বিভাগ, পুলিশ, ফাংশনাল ব্যুরোক্রেসি করতে পারি নাই। আমরা কমিটমেন্ট দিতে চাই, আমরা ফাংশনাল প্রতিষ্ঠান তৈরি করব, বিভাজনের রাজনীতি করব না।
বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, কোনো প্রেসক্রিপশনের খবরদারি থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, 'প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের তেজদীপ্ত চেতনার মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। যেখানে মতপ্রকাশের, দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। যেখানে কামার-কুমোরের ছেলেরা নেতা হবে।
গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের কথা বললেই গুম, খুন ও দেশছাড়া করা হয়েছে: নাসীরুদ্দীন
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, 'গত ১৫ বছরে আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেই গুম, খুন ও দেশছাড়া করা হয়েছে। এরপরেও ১৯৪৭ এর লড়াই থেকে শুরু করে হাসিনা পতনের লড়াই করে রক্তিম স্বাধীনতা এনেছে ছাত্র-জনতা। তারা এই পার্লামেন্টের সামনে থেকে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের পালাতে বাধ্য করেছিলেন। এখান থেকেই আমরা নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া হবে।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে স্টেট ইন্সটিটিউশনের ফাংশনাল অবস্থা নেই। '৭২ এর সংবিধান ছাত্র-জনতাকে হাসিনার ছোবল থেকে বাঁচাতে পারেনি। এজন্যই আমরা শহীদ পরিবারের সামনে, আহতদের সামনে, প্রবীণ রাজনীতিকদের সামনে নতুন দল ঘোষণা করব। এজন্য এর আগেই নাগরিক কমিটির ৫ শতাধিক কমিটি করে দল ঘোষণার পাটাতন তৈরি করা হয়েছে।'
বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠন করতে হবে: সামান্তা শারমিন
সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, 'বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ, এই রাষ্ট্রকে ঠিকভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হয়নি। এখন সেই দায়িত্ব আমরা নেব। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের কথা বলার কোনো দল না থাকায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল দরকার। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে এবং দুর্নীতিবিরোধী, চাঁদাবাজবিরোধী, খেটে-খাওয়া মানুষের কথা বলার জন্য একটি নতুন দল দরকার। আজকের এই দল হবে সেই অধিকার আদায়ের দল।'
জনগণের কাছে ক্ষমতা ফেরত দিতে এসেছি: ডা. তাসনীম জারা
সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা বলেন, 'আমরা এসেছি এমন দল করতে যা ক্ষমতা দখল করতে আসেনি, বরং জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফেরত দেবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য যেখানে কোনো পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। আমাদের হাত ধরেই বদলাবে বাংলাদেশ।'
জনগণ ৫ আগস্টের পর যে স্বপ্ন দেখেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: সারজিস
মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, 'জনগণ ৫ আগস্টের পর যে স্বপ্ন দেখেছে, সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেটা হলে আগামীর বাংলাদেশ হবে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। খুনি হাসিনার বিচার ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ছোট ছোট স্বার্থগুলো ভুলে গিয়ে কাজ করলে আমরা এগিয়ে যাবো। দয়া করে যেন আমরা কাউকে প্রতিপক্ষ না ভাবি। আমরা সবাই যেন খুনি হাসিনার থেকে শিক্ষা নিই। তাহলেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ সম্ভব।'