তাঁতিদের নামে আমদানি করা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে: উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন

তাঁতিদের নামে আমদানি করা শুল্কমুক্ত কাঁচামালের সুবিধা প্রান্তিক তাঁতিরা পাননা বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেছেন, সরকার উপকরণমূল্য কমানোর জন্য কিছু শুল্ক সুবিধা দিয়ে আমদানি করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এই দুর্বৃত্তায়ন ধনীকে ধনী করেছে, আর গরিবকে করেছে আরও গরিব।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) 'তাঁতিদের মাঝে ন্যায্য মূল্যে সুতা, রং ও রাসায়নিক সরবরাহ সংক্রান্ত প্রচলিত পদ্ধতির সংস্কার ও উন্নয়ন' বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। রাজধানীর জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, "এটা খুবই দুঃখজনক। এ সুবিধা না তাঁতি পেয়েছে, না সরকার। মাঝখানে কিছু লোক দুর্বৃত্তপুঁজি করেছে। এই দুর্বৃত্তপুঁজি কিছু মধ্যস্বত্বভোগী করে। যে মধ্যস্বত্বভোগী যৌক্তিক ব্যবসা করে তাদের অন্যায় দেখি না। কিন্তু দুর্বৃত্তপুঁজি অন্যায় দেখি।"
তিনি বলেন, "যে মূল্য সংযোজন করে ব্যবসা করে, সে লাভ করুক বা লোকসান, সেটা বৈধ। কিন্তু যখন কোনো ব্যবসায়ী দাদন কাগজ কিনে নিয়ে শুল্কসুবিধা নিয়ে কাপড় নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করে দেন, এটাতো ঠিক না। এভাবে তিনি ধনী থেকে ধনী হচ্ছেন। আর আপনারা (প্রান্তিক তাঁতি) দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হচ্ছেন।"
তিনি বলেন, "দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আমাদের রীতি গড়ে তুলতে হবে। রীতি দিয়ে সংশোধন করা যায়, যেটা অনেক সময় আইন দিয়েও পারা যায় না। আমাদের মতো একটি সমাজে সব কিছু আইন দিয়ে হয় না। এখানে রীতি থাকতে হবে। এখানে শুল্ক সুবিধা পেতে অনেক ধারা-উপধারা আছে, তারপরও ব্যাপক অন্যায় হয়েছে। কারণ রীতি ভেঙ্গে গেছে।"
"রীতি এমন জিনিস, যা আমাদের উন্নত করে। এ বিষয় আপনাদের (তাঁতিদের) সহোযোগীতা চাই। কোনো জায়গায় দুর্বৃত্তি হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে– আমাদের জানান, আমরা সেটা বন্ধে ব্যবস্থা নেব," যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, "তাঁতিরা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পরে, সেই উদ্দেশ্য আমাদের। অর্থনৈতিক স্ববলম্বী হতে গেলে আমাদের যে নিয়ামকগুলো দরকার, সেটা হলো আমাদের যৌক্তিক মূলে উপকরণ পেতে হবে। আমাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের পণ্যের বৈচিত্র আনতে হবে।"
অনুষ্ঠানে প্রান্তিক তাঁতিরা অভিযোগ করেন, তাদের জন্য শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির ব্যবস্থা আছে সরকারের। এ সুবিধা ব্যবহার করে সুতা ও রঙের মতো কাঁচামাল আমদানিও করে বিভিন্ন তাঁতি সমিতি। কিন্তু যাদের নাম করে এ সুবিধা নেওয়া হচ্ছে, সেই প্রান্তিক তাঁতিদের বেশিরভাগেরই এসবের কিছু জানা নেই। এ সুযোগে আমদানি করা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল দেশের বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র।
অনুষ্ঠানে পেপার প্রেজেন্টেশনে কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে আসে সেখানে বলা হয়, প্রান্তিক তাঁতিদের মূলধনের অভাব রয়েছে, অমদানির প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে তাঁতি সমিতির সদস্যদের সচেতনতার অভাব রয়েছে, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি এবং আমদানিকৃত কাঁচামাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে।
সিমম ফেব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল হক বলেন, "দেশে হস্তচালিত তাঁত ক্রমাগতভাবে কমছে। এ পেশায় আয় কম, তাদের পর্যাপ্ত মূলধনের অভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য তারা আবেদন করতে পারেন না। তাই মহাজন ধরে তাদের কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হয়।"
তাঁতশুমারির পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশে হস্তচালিত তাঁত ইউনিট ১ লাখ ১৬ হাজার। মোট তাঁতির সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।
অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট সচিব মো: আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমেদ সিদ্দিক বক্তব্য রাখেন।