অপারেশন ডেভিল হান্ট: হাতিয়ায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ৭ আ.লীগ নেতা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রথম দিনে নোয়াখালীর মেঘনা নদীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন—চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ (৬৪), হাতিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাদ্দাম হোসেন (২৬), ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম বিটু (৪৪), নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন (৩১), তমরদ্দি ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম ওরফে রাকছান (২৪), আবদুল মাজেদ ওরফে পলাশ (৪৩) ও আব্দুল জাহের (৩৯)।
যৌথবাহিনীর এ অভিযানে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও পুলিশের সদস্যরা অংশ নেন।
হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা জানান, আলাউদ্দিন আজাদকে ওছাখালী পুরাতন বাজার এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এবং তিনজনকে তমরদ্দি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খাসেরহাট এলাকা থেকে এবং বাকিদেরকেও বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি প্লাস্টিকের হাতলযুক্ত ধারালো ছুরি, একটি কুড়াল, দুইটি কাঠের হাতলযুক্ত ছুরি ও তিনটি লম্বা তলোয়ার উদ্ধার করা হয়।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর হাতিয়ায় এটিই ছিল প্রথম অভিযান। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর অভিযানও অব্যাহত থাকবে।'
এদিকে, এই অভিযানের আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিন্টো রোডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে তিন ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'। বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সংগঠনের অন্যতম নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ।
তিনি এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, হাতিয়ায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যদিও একাধিকবার এ বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। এই দাবিতে আন্দোলনকারীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগও দাবি করেন।
পরে রাত ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে বলেন। তিনি আশ্বাস দেন, শিগগিরই সাভার ও হাতিয়ায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।
হান্নান অভিযোগ করেছিলেন, বারবার অনুরোধের পরও তার এলাকা হাতিয়ায় অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর প্রতিবাদে হান্নানসহ অন্যরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানান।
এর আগে, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন মাসউদ।
প্রথম পোস্টে তিনি লেখেন, 'আমার জন্মভূমি হাতিয়ায় সাবেক এমপি জলদস্যু মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। প্রশাসন আছে, কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রও আছে। আমার ভাইদের ওপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, আমি যাচ্ছি। হয় জন্মভূমি, নয় মৃত্যু। দোয়া করবেন।'
তিনি আরও লেখেন, 'স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, নেভি ক্যাম্পের পাশেই অস্ত্রভর্তি মোহাম্মদ আলীর আস্তানা।'
দ্বিতীয় পোস্টে মাসউদ লেখেন, 'স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যাচ্ছি, ওখানে অবস্থান করবো রাত ১২:৩০টা থেকে। ওনারা ঘুমাবেন, আর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ওপর গুলি করবে। যারা সঙ্গ দেবেন, আসতে পারেন।'