গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: গ্রেপ্তার ১৬, ওসি সাময়িক বরখাস্ত, ক্ষমা চাইলেন মহানগর পুলিশ কমিশনার

গাজীপুরের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করীম খান।
তিনি বলেছেন, দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সদর থানার ওসিকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'গতকাল রাতে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি শুনেছি, আমার ওসি দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বললাম, তাকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করব। আমি বলতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না।'
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ রাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমন করার জন্য 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' পরিচালনা করা হবে।
এ সময় পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশের পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা জানান, গতকাল শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাটের খবর পেয়ে ছাত্ররা তা বন্ধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
এ হামলার প্রতিবাদে শহরের রাজবাড়ীর মাঠ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে আজ দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে হামলার ঘটনায় জড়িত সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, রাসেল এবং আওয়ামী দোসর ও সন্ত্রাসীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দাবি, হামলার ঘটনায় জড়িত সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরসহ তাদের দোসরদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।
আজ দুপুরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল থেকে তারা এ দাবি জানান। তারা আরও দাবি করেন, শুক্রবার রাতে শিক্ষার্থীদের সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে আটকে রাখার খবর পেয়ে ১৫ শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।