লালফিতার দৌরাত্ম্যের সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্কার কমিশনের পরামর্শ

আমলাতন্ত্র, শাসন, ব্যবসা এবং কর ব্যবস্থায় অতি-নিয়ন্ত্রণ এবং লালফিতার দৌরাত্ম্যের সমাধানের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক সংস্কার কমিশন (আরআরসি) গঠনের পরামর্শ দিয়েছে সরকারি টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'অতি-নিয়ন্ত্রণ এবং আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্মের কারণে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এই ব্যাপক সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক সংস্কার কমিশন (আরআরসি) অপরিহার্য।'
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে 'অর্থনীতির পুনর্কৌশলীকরণ এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সম্পদ সহজলভ্য করণ' শীর্ষক প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উন্নয়ন কৌশল পুনর্গঠন, আর্থিক ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরআরসি-র কাজ হবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কর এবং বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক শাসনের সকল দিককে প্রভাবিত করে এমন নিয়মকানুন ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সুবিন্যস্ত করা।
আরআরসি সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রক অদক্ষতা চিহ্নিত করবে, যেমন অতিরিক্ত পেপারওয়ার্ক, গুরুত্বপূর্ণ সম্মতির প্রয়োজনীয়তা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং শুল্ক বিভাগের মতো কর্তৃপক্ষের বিবেচনামূলক ক্ষমতা।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে এই চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে, আরআরসি এমন সংস্কারের পক্ষে সমর্থন জানাতে পারে যা আরও অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশকে সহজতর করবে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এই সংস্কার উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা করার সহজতা (ইওডিবি) নাটকীয়ভাবে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশীয় এবং বিদেশী উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলবে।'
বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ এবং সরকারের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সম্বলিত একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তদারকি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্স বলেছে, কমিটি মূল্যায়ন এবং কাস্টমস, ভ্যাট এবং কর সম্পর্কিত অসঙ্গতিপূর্ণ, স্বেচ্ছাচারী এবং বৈষম্যমূলক নীতি বা নিয়ন্ত্রক বাধা অপসারণের জন্য এনবিআর কীভাবে পুনর্গঠন করা উচিত— সে সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ করবে।
এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত), প্রকৌশল এবং আইসিটি/এআই (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য কমপক্ষে একটি 'সেন্টার অফ গ্লোবাল এক্সিলেন্স' স্থাপনের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধরনের এক্সিলেন্স সেন্টার কেবল স্থানীয় শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করবে না, বরং আন্তর্জাতিক পণ্ডিত এবং গবেষকদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যেও কাজ করবে।
বাংলাদেশ বিমান সম্পর্কে টাস্কফোর্স পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা আধুনিক বিমান চলাচলের মান এবং কর্মক্ষমতা মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিমান মূলত শুধুমাত্র অভিবাসী শ্রমিকদের একটি গন্ডিবদ্ধ বাজারে পরিষেবা প্রদানের ওপর নির্ভর করে এর অস্তিত্ব বজায় রেখেছে, যাদের অনেকেই খারাপ পরিষেবার কথা জানিয়েছেন।
টাস্কফোর্স বলেছে, এয়ার লাইনের বাজারে বিমানের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য, সরকারকে বিমানের জন্য একটি স্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য কর্মক্ষমতা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
যদি বিমানের কর্মক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়, তাহলে টাস্কফোর্স বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ নামে একটি সম্পূর্ণ নতুন বিমান সংস্থা তৈরির প্রস্তাব করেছে, যা বিমানের বিদ্যমান সম্পদের অর্ধেক ব্যবহার করবে এবং একটি স্বাধীন, বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বর্তমান প্রচেষ্টার খণ্ডিত প্রকৃতি মোকাবেলা করার জন্য টাস্কফোর্স একটি স্বাধীন 'সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিওরাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ' (সিএসবিসিসিএন্ডআর) প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, সিএসবিসিসি এন্ড আর ঐতিহ্যবাহী মিডিয়া এবং ডিজিটাল যোগাযোগ কৌশল উভয়ের জন্য একটি কাঠামোগত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে এবং যোগাযোগ পদ্ধতির আধুনিকীকরণ, সম্প্রদায়গুলোকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল ব্যবহার করার ওপর জোর দেবে।