ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবি: আশুলিয়ায় ২৯ কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ

সরকার ঘোষিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখান করে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) অব্যাহত রয়েছে।
দুপুরে বিজিএমইএ সুত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ করার দাবিতে চলমান আন্দোলনের জেরে আশুলিয়া আজ মোট ২৯ টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় 'নো ওয়ার্ক, নো পে'-এর ভিত্তিতে বন্ধ রয়েছে ৮টি কারখানা, স্ব-বেতনে ছুটি রয়েছে ৮টি কারখানা এবং কাজ না করে শ্রমিকরা চলে গেছে বা কাজ বন্ধ করে বসে আছে এমন কারখানার সংখ্যা ১৩টি।
শিল্প পুলিশ বলছে, শ্রমিকরা ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করলেও, কর্মবিরতি পালন ছাড়া কোনো বিশৃঙ্খলা করছেন না। সকল পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পুলিশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে– নাসা গ্রুপ, ট্রাউজার লাইন ও আল মুসলিম। সাধারণ ছুটিতে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে– নিউ এইজ গার্মেন্টস, নিউ এইজ অ্যাপারেলস, মেডলার অ্যাপারেলা এবং ব্যান্ডো ডিজাইন।
এছাড়া, শ্রমিকরা কারখানায় এলেও কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে– নীট এশিয়া লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেড, ডেকো ডিজাইন লিমিটেড, শারমীন ফ্যাশন, শারমীন অ্যাপারেলস, ইথিকাল গার্মেন্টস, আগামী ফ্যাশন, ক্রসওয়্যার, ফ্যাশন ফোরাম এবং মুন রেডিওয়্যার লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি কারখানা।
নীট এশিয়াসহ শ্রমিকরা কাজ না করে চলে গেছেন, এমন একাধিক কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
এসব কারখানার শ্রমিকরা জানান, দাবি একাধিক হলেও তাদের মূল দাবি, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ করা।
কাজ না করলে কেন শ্রমিকরা কারখানায় আসছেন এবং এলেও কাজ না করে কেন চলে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে একজন শ্রমিক বলেন, "কারখানায় আসার আগ পর্যন্ত শ্রমিকরা জানেন না কাজ হবে কি না। এটা নির্ভর করে কারখানায় আসার পরে কি পরিস্থিতি তৈরি হয় তার ওপর।"
তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে আশেপাশের কারখানাগুলোতে কি হচ্ছে সেটিও বোঝা হয়। যখন খবর আসে অন্য কারখানাগুলোও কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন এখানেও একে একে সব ফ্লোরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়"।
তিনি আরও বলেন, "অনেকেই আছেন যারা কাজ করতে চান। কিন্তু যখন একটি বড় অংশ কাজ বন্ধ করে দেয়, তখন তার পাশে বসে থেকে তো আর আপনি একা কাজ করতে পারবেন না; বা করেও লাভ নেই।"
ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করেন না এমন একজন শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, "একটি কারখানায় হাজার শ্রমিক কাজ করলেও কিংবা একেকটি ফ্লোরে শত শত শ্রমিক কাজ করলেও, এর অধিকাংশই নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকেন। হাতে দুই তিনজন থাকে যারা আন্দোলন তৈরি করে। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা যখন দেখেন যে-সব দাবি তোলা হচ্ছে তা সকল শ্রমিকের স্বার্থ, তখন তারা এতে সমর্থন দেন।"
তিনি বলেন, "একইভাবে তারা নির্ভর করে থাকেন তাদের ওপরেই, যাদের হাত দিয়ে আন্দোলনটা শুরু হয়। আবার যারা আন্দোলন সমর্থন করে না, তাদেরও কিছু করার থাকে না। আপনি একা কাজ করতে চাইলে তো আর পারবেন না। আবার অন্যদের রোষানলে পড়ার ঝুঁকিও থাকে।"
ওই শ্রমিক আরও বলেন, "আমার মনে হয় না দেশের এই পরিস্থিতিতে ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সিদ্ধান্তের পর আর এই আন্দোলনের কোন যৌক্তিকতা আছে। আপনার প্রয়োজন অনেক থাকবে, তাই বলে সবটাই যে আপনি পাবেন সেটাও তো না। এখন যা হচ্ছে তা শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে। আমি তো আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তায় আছি।"