শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৩ জনের মৃত্যু, বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পানি বেড়েছে। এতে আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) নতুন করে কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বন্যায় গতকাল শুক্রবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবীল ইউনিয়নের ইদ্রিস আলী (৬৫), পোড়াগাঁও ইউনিয়নের জহুরা (৭০) ও বাঘবেড় ইউনিয়নের আমিজা খাতুন (৪৫)।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্যাকবলিত এলাকার অনেকেই ঘরের আসবাবপত্র ও হাঁস-মুরগিসহ গবাদিপশু রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। যার কারণে বন্যায় হতাহতের শঙ্কা আরও বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাত এবং মহারশী নদীর বিভিন্ন জায়গায় পাড় ভেঙে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। একইসঙ্গে ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ১০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম।
এর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন, মালিঝিকান্দা ও নলকুড়া ইউনিয়ন এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়ন, নয়াবীল, পোড়াগাঁও, বাঘবেড়, রামচন্দ্রকুড়া ও কলসপাড় ইউনিয়নের গ্রামগুলো বেশি প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে।

এদিকে নতুন করে ঢলের পানি না আসায় আজ শনিবার সকাল থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। তবে নালিতাবাড়ীতে পানি বেড়ে শনিবার সকাল থেকে নতুন করে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের দিঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, প্রবল স্রোতে মহারশী নদীর বাঁধ ভেঙে ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। আক্রান্তদের পর্যাপ্ত খাবারও নেই।
নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবীল ইউনিয়নের বাসিন্দা জোৎস্না বেগম জানান, গতকাল থেকে কোনো বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলছে না। শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই না খেয়ে আছে। পানিতে ডুবে আছে টিউবওয়েল ও টয়লেট। ফলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। হাঁসি-মুরগি সব পানিতে ভেসে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় সাত হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ সম্পূর্ণ ও ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিকভাবে পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে ৬০০ হেক্টর জমির শীতকালীন শাক-সবজি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাজীবুল ইসলাম জানান, বন্যায় ঝিানাইগাতীর ৭টি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, উপজেলার ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও সেনা সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে যেহেতু পানির স্রোত বেশি- সেজন্য উদ্ধারকাজে ইঞ্জিন চালিত নৌকা পেলে ভালো হতো। তবে গতকাল রাতেই দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও খাবার বিতরণ করা হবে।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঝিনাইগাতীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নতুন করে আর ঢলের পানি প্রবেশ করেনি। তবে আজকে নালিতাবাড়ীর কিছু জায়গায় পানি বেড়েছে। বন্যায় গতকাল পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নালিতাবাড়ীতে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে।