‘রিমেমবারিং আওয়ার হিরোজ’: শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে শিক্ষকরাও

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা রিমেমবারিং আওয়ার হিরোজ কর্মসূচি পালন করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর 'গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ, জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্ত করে বিচার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবি আদায়ের' লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
দেশের অনেক জায়গায় কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা আসে। বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষকেরা বাধা দেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়ে অন্তত ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে 'রিমেমবারিং আওয়ার হিরোজ' কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এর আগের দিন বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে দেখা যায়।
বিচার চান ঢাবি শিক্ষকরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নিপীড়ন বন্ধ এবং ক্লাস ও হল পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তৃতাকালে শিক্ষকরা আহত ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে। পাশাপাশি ক্যাম্পাস থেকে সব সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের অপসারণের আহ্বান জানান।
রাজধানীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে যোগ দেন।
অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বলেন, হল খালি করে ক্যাম্পাস বন্ধ করার এখতিয়ার উপাচার্যের নেই।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরিন আমিন ভূঁইয়ার ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে একই স্থানে পৃথক বিক্ষোভ করেন অর্থনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পরে রাজু ভাস্কর্য থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
প্লিজ, আর নয়, মৃত্যুলীলা বন্ধ করুন: ডিআরএমসি শিক্ষক
সরকারের উদ্দেশে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল ফেরদৌস আরা বেগম বলেছেন, 'প্লিজ, আর নয়, মৃত্যুলীলা বন্ধ করুন।'
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে এসে তিনি এ কথা বলেন। ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, 'আমি এখানে এসেছি, আমার সন্তান, ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ জানাতে। স্বাধীন দেশে কীভাবে এত রক্ত ঝরল? প্রাণ গেল?'
তিনি বলেন, 'কোটা বৈষম্যবিরোধী মিছিলে যদি আমার সন্তান থাকত, সে-ও তো গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যেত। এই শোচনা থেকেই আমি এখানে এসেছি।'
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'প্লিজ, আর নয়, এই মৃত্যুলীলা বন্ধ করুন, বন্ধ করুন, বন্ধ করুন।'
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের 'বাধায়' অনুষ্ঠানটি ঠিকমতো অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
জাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরাও যোগ দেন।
এছাড়া সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে সাভারের বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকেরাও অংশ নেন।
পরে সেখান থেকে প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরোনো ফজিলাতুন্নেসা হলসংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়ার চেষ্টা; ধস্তাধস্তি করে ছাড়ালেন শিক্ষকেরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের কর্মসূচি শেষে কর্মসূচিস্থল থেকে শিক্ষার্থীকে গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নেওয়ার চেষ্টাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়েছে। এতে এক পর্যায়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে জড়ো হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্কের শিক্ষকরা। এসময় শহরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে এসে অংশ নেন।
তারপর সেখান থেকে মুখে লাল কাপড় বেঁধে একটি মৌন মিছিল শুরু করেন শিক্ষকরা। তাতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরাও। প্রায় ঘণ্টাখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এসেই মৌন মিছিল শেষ হয়।
মৌন মিছিল শেষে শিক্ষাথীরা ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় পুলিশ কয়েকজন শিক্ষাথীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টাকালে ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে সেখানে শিক্ষকরাও ছাত্রদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে সাদা পোশাকের পুলিশের ধস্তাধস্তি বেধে যায়।
পরে একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের হস্তক্ষেপ তারা তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
এর আগে বুধবার আটক হওয়া তিন শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষকরাও।
বরিশালে পুলিশের বাধা, আটক ১২
গতকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১২টায় 'ছাত্র-শিক্ষক সংহতি সমাবেশ' কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ ১২ জন শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দেওয়া হয় এবং সেখানে অবস্থান নেয় পুলিশ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌন মিছিল
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে গতকাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।
বিক্ষোভকারী শিক্ষকরা তাদের মুখ ও মাথা লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন।
তারা শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এদিকে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় নয় শিক্ষার্থীসহ ১১ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন খুলনার আদালত।
বুধবার 'মার্চ টু জাস্টিস' কর্মসূচি চলাকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যান্য জেলায়ও কর্মসূচি, বাধা
গতকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ'-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
তবে মানবন্ধনে যোগ দিতে আসা শিক্ষকদের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কুড়িগ্রামে আয়োজিত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুর ১২টায় 'সাধারণ শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম'-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক ও পেশাজীবীরাও অংশ নেন।