সিলেটে বন্যায় ঝুঁকিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র; সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ঝুঁকিতে পরেছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সুরমা নদী ছাপিয়ে এই বিদ্যুতকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এটি প্লাবিত হলে দক্ষিণ সুরমার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারে।
আজ (মঙ্গলবার) বিকেল থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে তারা।
এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এসব পর্যটন কেন্দ্রে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আজ বিকাল চারটার দিকে সেনাবাহিনীর এক টিম নিয়ে সাব-স্টেশনটি পরিদর্শন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরি। এসময় তিনি বলেন, "এই সাব-স্টেশনে কোনো সমস্যা হলে চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এছাড়া যাতে পানি না উঠে সেজন্যও কাজ করা হচ্ছে।"
জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি উপ-কেন্দ্রটি সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ এর অধীন। এই উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, "উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উঠার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো উঠেনি। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। সেনাবাহিনীও সাহায্য করছে।"
এদিকে ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা পানিতে ভাসছে সিলেট। গতকাল (সোমবার) ঈদের দিন সকাল থেকে সিলেটের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এর আগে ২০২২ সালের বন্যায়ও তলিয়ে গিয়েছিল এ বিদ্যুতকেন্দ্র।
সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটায় জননিরাপত্তা বিবেচনায় জাফলং, জলারবন রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই পর্যটন স্পট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এসব স্পটে পর্যটকরা আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রেও পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ (মঙ্গলবার) দুপুর পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার্তদের জন্য জেলায় ৬১৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
এছাড়াও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।
