চেষ্টা সত্ত্বেও, উপজেলা নির্বাচনের ২য় ধাপে ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে

ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যাপক প্রস্তুতি, চেষ্টা সত্ত্বেও গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে। নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।
গতকাল (২১ মে) দেশের ৬৩ জেলার ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ভোট-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়।"
দ্বিতীয় ধাপে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, "আমি ব্যক্তিগতভাবে মাত্র ৩০% ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক বলে মনে করি না। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে; সম্ভবত এটিই জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করেছে।"
ভোটে কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, "রাজনীতিতে সংকট রয়েছে। রাজনীতি যদি সুষ্ঠুভাবে চলে, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে কম ভোটার উপস্থিতির সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে।"
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সুস্থভাবে চলতে এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উৎসাহিত করা হবে। তারা আরও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবেন।
এর আগে, গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৬.১%।
আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দিলেও নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরাই অংশ নিয়েছেন। প্রথম বা দ্বিতীয়— কোনো ধাপেই অন্য কোনো দলের এত বেশি প্রার্থীর অংশগ্রহণ ছিল না। তাই নির্বাচনে মূলত প্রতিযোগিতা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে।
পূর্ববর্তী নির্বাচনের তথ্যে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৮.৩২ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬১ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছিল ৪০.২২ শতাংশ।
আর এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি নেমে আসে ৩৬ শতাংশে এবং দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৩০ শতাংশে, যা এ যাবতকালের সর্বনিম্ন।
দ্বিতীয় ধাপে, চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন মিলে মোট ১,৮২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে ৭ জন চেয়ারম্যান, ৮ জন ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ৭ জন মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানসহ মোট ২২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ১৩,০১৬টি কেন্দ্রে ৩,৫২,০৪,৭৪৮ জন ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কথা ছিল।
'নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল'
এদিকে, গতকালের নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা তেমন ঘটেনি। হতাহত হয়েছে দু-একজন। গরম বা অন্য কারণে দুজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সহিংসতা হয়নি।
তিনি বলেন, "হাতাহাতিতে সবমিলিয়ে ৩৩ জন আহত হয়েছেন, তার মধ্যে এক থেকে দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।"
যেসব জায়গায় অনিয়ম অনাচার ভোট কারচুপির চেষ্টা হয়েছে— সেসব জায়গায় প্রশাসন তৎপর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, "২৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হতে চেয়েছিলেন। এছাড়া ১০জনকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাদণ্ড আরোপ করা হয়েছে জাল ভোট দেওয়ার জন্য।"
ভোটে মিডিয়ার ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা শুনেছি মিডিয়ার কিছু কর্মী আহত হয়েছেন। কোথাও কোথাও তারা সাহস করে ছবি তুলতে গেছেন। তারা হয়তো হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সঠিক তথ্য এখনো পাইনি।"
"আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। আপনারা সাহস করে তথ্য সংগ্রহ করবেন, আমাদের সাপোর্ট আপনাদের সঙ্গে থাকবেন। আমরা আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আইন ও বিধান করেছি, যাতে আপনারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন," যোগ করেন তিনি।