বিদ্যুতের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হলেও বেড়েছে লোডশেডিং

গত ২২ এপ্রিল (সোমবার) দেশে ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। যা এ যাবৎকালে দেশের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু উৎপাদন বাড়লেও তীব্র তাপদাহের মধ্যে সারাদেশে বেড়েছে লোডশেডিং। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে তীব্র লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।
দেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
আরইবির জোনভিত্তিক বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টার দিকে এই বিতরণ কোম্পানিকে এক হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এই সময় সারাদেশে কোম্পানিটির বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৮৯৬ মেগাওয়াট, সরবরাহ করেছে ৭ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট।
গতকাল আরইবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলে। অঞ্চলটিতে লোডশেডিং হয়েছে ৫১৭ মেগাওয়াট, যা ছিল ৪২ শতাংশ লোডশেডিং।
এছাড়াও চট্টগ্রামে ১৪৯ মেগাওয়াট, ঢাকাতে ৫৬৩ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ২৩০ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ২০৭ মেগাওয়াট ও রংপুরে ৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। তবে বরিশাল, সিলেট ও খুলনায় এলাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরইবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না শর্তে টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে আমাদের বিতরণ এলাকায় যে চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। যার কারণে এই গরমের মধ্যেও বাধ্য হয়ে আমাদেরকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।"
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রায় সারারাত বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের গ্রামে দিনে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। সরকার দাবি করছে যে, দেশের বিদ্যুতের সক্ষমতা ১০০ ভাগ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। সরকারের উচিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।"
নরসিংদীর বাসিন্দা হাসিব তানভীর বলেন, "এখন লোডশেডিং খুব বেশি। পরিস্থিতি অসহনীয়। অনেক দিন আগেও তাপদাহে বিদ্যুৎ ছিল না। মশার সমস্যার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের তীব্র দুর্ভোগও রয়েছে।"
এদিকে রাজধানীতে বিদ্যুত সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে ঢাকার বিদ্যুত সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। লোডশেডিং না হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু কিছু এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানা যায়।
বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যে দেখা যায়, গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল ৩ টার সময় সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। সেই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ২০২ মেগাওয়াট। তখন লোডশেডিং হয় ১০৪৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, "পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে আমরা ফুললোডে চালাতে বলছি। কিন্তু এখানে বড় বিষয় হলো ফাইন্যান্স। আমাকে নিয়মিত গ্যাস দিতে হবে। আমি তো পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে বসে আছি। আমার মেইন চ্যালেঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো চালু রাখা। তাদের ফাইন্যান্স সাপোর্ট দেওয়া।"
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, "বিদ্যুৎ বিভাগ যেভাবে পরিকল্পনা করছে তাতে এ বছর ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী উৎপাদন করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর নতুন করে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তাই গতবছরের তুলনায় লোডশেডিং কমছে-এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫শ থেকে ১৫শ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।"
এদিকে তাপমাত্রা আগামী ১ সপ্তাহ পর্যন্ত কমার পূর্ভাবাস নেই বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ দ্য বিজনেস স্টাডার্ডকে বলেন, ''আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান এ তাপমাত্রা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপরে অব্যাহত থাকবে।''