কদর নেই ছোট দলগুলোর, অপেক্ষা ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। বাকি আসনগুলোতে নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ নিয়ে চিন্তিত ছোট দলগুলো। আওয়ামী লীগ যেভাবে জাতীয় পার্টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেভাবে কদর পাচ্ছে না ছোট দলগুলো। ছোট কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন কতটি আসনে ছাড় পাবে এ বিষয় কিছু জানে না। তাই তাকিয়ে আছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দলগুলো আশা করছে আওয়ামী লীগ কিছু আসনে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিবে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৪ জনের মতো প্রার্থী দিচ্ছে। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, "আমরা ৫টি আসন চেয়েছি তবে এখনও কোন আশ্বাস ওইভাবে পাইনি। তবে আমাদের আমীর আতাউল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর মানিকগঞ্জ-১ থেকে নির্বাচন করছে। আশা করে আছি এখানে আসনটা ছাড় দিতে সরকারের নজর থাকবে।"
তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল কিছু আসনে প্রার্থী দিতে এর মধ্যে আছে কুমিল্লা-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, ফরিদপুর ২। আমরা কিছু আসন পাবো এমন আশ্বাস ছিল।"
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি)।
নির্বাচনে আসা আলোচিত তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপি দেয় ১৫১টি, বিএনএম দেয় ৪৯টি আসনে প্রার্থী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দুটি দলই ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের মিত্র দল হিসেবে ভোটে আসছে কিছু দল।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী বলেন, 'আমরা এবার জোটের কাছে ৫টি আসন চেয়ে জমা দিয়েছি। তবে এখনো কোন আসন দেইনি। মনে হয় জাতীয় পার্টির সঙ্গে বসার পর আমাদের ১৪ দলের আসন চূড়ান্ত করবে। আমাদের দল থেকে চট্টগ্রাম ২ ও ১ এর মধ্যে যেকোন একটা, কুমিল্লা ৮ ও ৯ যেকোন একটা, চাঁদপুর ৫ ও ৬ এর যেকোন একটা এবং চট্টগ্রাম-৫ আর ময়মনসিংহ সদরের একটি আসন চেয়েছি।'
গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই জোট আগেও ছিল এখনও আাছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। এবং জোটের নেতৃত্বে নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই সব প্রার্থীরা নির্বাচন করুক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।'
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত ২০ নভেম্বর কিংস পার্টিখ্যাত তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতা সমশের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, আসন ছাড়ের বিষয় তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
গত ২৪ নভেম্বর ইসলামপন্থী ৯টি রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নেতাদের দলগুলো মধ্যে ছিল ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট।
এ সময় তারাও সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা চান বলে অংশগ্রহণকারীরা জানান।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, 'আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। চাওয়ার সময় তো সবাই আসন চায়। তবে আমরা এখনও কোন আসন ছাড় পাওয়ার আশ্বাস পাই নি।'
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এরইমধ্যে হাসানুল হক ইনু সহ জাসদের ৯১ জন, রাশেদ খান মেনন সহ ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩ জন, বিকল্পধারার ১৪ জন, তরিকত ফেডারেশনের ৪৭ জন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন।