নেই কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি; ‘ভুঁইফোড়’ প্রার্থীদের দেখে অবাক ভোটারেরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত ছয় জন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র দুই জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি ৪৪ প্রার্থী রাজনৈতিকভাবে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় তেমন পরিচিত নন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর শক্ত কোনো কারণ বা যুক্তিও দিতে পারেননি অনেক প্রার্থী। অন্যদিকে ভোটারেরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে কখনো এলাকায় নির্বাচন নিয়ে এ প্রার্থীরা কোনো কথাই বলেননি।
খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ।
এদের মধ্যে ননী গোপাল মন্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তিনি বলেন, 'দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী।'
ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস ধরে নির্বাচনের জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায়। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক এ সচিব বলেন, 'আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।'
তবে বাকি চারজন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকেই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও তারা কোনো উত্তর দেননি।
অন্যদিকে জাকের পার্টি মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়ন জমা দিয়েছি।'
বটিয়াঘাটা বাজারের মুদি দোকানদার আশিকুল ইসলাম বলেন, 'প্রশান্ত ও ননী গোপাল বাদে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, আগে কখনো তাদের নাম শুনিনি। তারা শুধু শুধু নির্বাচনে এসে জামানাত হারাবেন।'
খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নয়জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।
এদের মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনো রাজনৈতিক মাঠে দেখা যায়নি।
কেন প্রার্থী হয়েছেন, এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার বলেন, 'অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।'
খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্গলাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।
এদের মধ্যেও কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনবারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ওই আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।
খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ১৪ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাকি ১২ জন প্রার্থীর নামও খুব একটা শোনেননি এলাকার ভোটারেরা।
খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দেওয়া সাতজনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্র চন্দ একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ আসনে আওয়ামী লীগের এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। তবে বাকি প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচিতি নেই বলেই জানা গেছে।
খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের দলীয় কোনো পদ নেই। তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত আরেক প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধুর। তিনি আগেও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৫৩ জন। মনোনয়নপত্রগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বৈধ প্রার্থীদের তালিকা নির্দিষ্ট তারিখে ঘোষণা করা হবে।