কক্সবাজার রেল লাইন ছাড়াও ৫৩ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার রেল লাইন। এদিন আরও ১১টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি।
এসব প্রকল্পের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া, একইদিন তিনি প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ প্রকল্পের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য বলছে, রেল লাইন ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে ১১টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২শত মেগা ওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ।
এছাড়া, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৩টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রকল্পও রয়েছে।
মাতারবাড়ি ১২ শত মেগা ওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তার ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১২ শত মেগা ওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২৯ জুলাই দুপুরে। ৬ মেগা ওয়াটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ১২ মেগা ওয়াটের উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরের শুরুতে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনওয়ার হোসেন মজুমদার জানান, উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি এক হাজার ৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে দুটি ইউনিটে বিভক্ত এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) বাস্তবায়ন করে।
প্রকল্পের নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিকিটক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার' প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫১,৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পটিতে আগে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) ঋণ দেওয়ার কথা ছিল ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এবার সেই ঋণ বাড়িয়ে জাইকা মোট ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা দেয়। প্রকল্পটিতে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হয় ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত কুতুবদিয়া
স্বাধীনতার ৫২ বছরে প্রথমবারের মতো গত ১৩ এপ্রিল বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয় দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। আগের দিন ১২ এপ্রিল রাত থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার গ্রাহক পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পেতে শুরু করে।

প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, দ্বীপে ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ওই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চালু করা হয়। আবেদন করা ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন' প্রকল্পটির মেয়াদকাল ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই দ্বীপটিতে পৌঁছে গেল জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।
প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, প্রকল্পের অধীনে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া। বিদ্যুৎ নিতে সাগরতলে দুই লেনে গেছে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার ক্যাবল। ওখানে ১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র, ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন বিতরণ স্থাপন হয়েছে।
বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ
এলজিইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত হচ্ছে এ সেতু। ৫৯৬ মিটারের এই সেতুর জন্য ব্যয় হচ্ছে ২৫৯ কোটি টাকা।
সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের গত ১ সেপ্টেম্বর। ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগে।
প্রকল্প বাস্তয়ানকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি'র কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, "কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশে বাঁকখালী নদী প্রবাহমান। এই বাঁকখালী নদীর পাড়েই যেই জায়গায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটা ময়লার ভাগাড় ছিল। সেই জায়গায় এখন একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং গুণগত মানের বিষয়ে জিরো টলারেন্স রেখে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। এই সেতুটি নির্মাণের ফলে যে বিষয়টা আমাদের নতুন মাত্রা যোগ করেছে সেটি হলো পর্যটন শিল্প।"
কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান আরও বলেন, "কক্সবাজার শহরের উত্তর দিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণের ফলে নবগঠিত ঈদগাও উপজেলার সঙ্গে দূরত্ব কমে যাবে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব অনেক কমে যাবে।"
প্রবাসি কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নিমার্ণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।