‘ভুল চিকিৎসা’: ল্যাবএইড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ৫ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের

রাজধানীর ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এইচএসএসি শিক্ষার্থী তাহসিন হোসেন-এর (১৭) মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাত অভিযুক্ত হলেন: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম, শাখা ব্যবস্থাপক (ধানমন্ডি) মো. শাহজাহান, ডা. মো. সাইফুল্লাহ, ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ ও ডা. কনক।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন ওই কিশোরের বাবা মনির হোসেন।
ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
'আমি ডা. সাইফুল্লাহকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি আমার ছেলের সমস্যা কী। কিন্তু উনি কোনোবারই সঠিক করে কিছুই বলতে পারেননি। অথচ তার দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। সেটা যে ভুল চিকিৎসা ছিল তা আমি নিশ্চিত। আমি প্রথম অপারেশনের পর ছেলেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্রও দেয়নি,' মনির বলেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ডা. এ এম শামীম বলেছেন, সব নিয়ম-নীতি মেনেই ওই রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছিল।
তিন মাস আগে পাকস্থলীতে মারাত্মক সংক্রমণে ভোগা তাহসিনকে ডা. সাইফুল্লাহর অধীনে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষানিরীক্ষার পর তার অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনবার মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল বলেও জানান ডা. এ এম শামীম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাহসিনকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে দেয়নি — এমন অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
'তার শরীর থেকে মেডিকেল ডিভাইসগুলো খোলার কোনো পরিস্থিতি ছিল না,' বলেন তিনি। শামীম আরও বলেন, রোগীর পরিবারকে ছয়–সাত লাখ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, পেটব্যথার পর ১৭ বছর বয়সী তাহসিনকে গত ২৭ মার্চ ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে ডা. সাইফুল্লাহকে দেখানো হয়। ডা. সাইফুল্লাহ তাহসিনকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।
হাসপাতালে পরীক্ষানিরীক্ষার পর রোগীর মলত্যাগে অসুবিধা থাকার কথা জানা যায়। তখন ডা. সাইফুল্লাহ দ্রুত অস্ত্রোপচার করানোর কথা বলেন। পরে গত ২৮ মার্চ তাহসিনের অস্ত্রোপচার করা হয়।
এরপর তাহসিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তখন ডা. মাকসুদ আবার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। ৬ এপ্রিল তাহসিনের দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করেন ডা. সাইফুল্লাহ।
দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পরেও রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এর তিন মাস পর ২৩ জুন তাহসিনের মৃত্যু হয়।
ওই তিন মাসে তাহসিনকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। চিকিৎসার ব্যয় হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ২৭ লাখ টাকা বিল করে।
এর মধ্যে দশ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে তাহসিনের লাশ গ্রহণ করে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।