মে দিবসে ১২ দাবিতে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সমাবেশ
মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে মোট ১২টি দাবি নিয়ে সমাবেশ পালন করেছে চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।
সকাল ৯টায় সাভারের হরিণধরা এলাকার চামড়া শিল্পনগরীতে এই সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, "আমরা মোট ১২টি দাবিতে মহান মে দিবসে সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। আশা করি, সরকার ও মালিক পক্ষ আগামী ৩ মাসের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবেন। অন্যথায় ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।"
এ সময় মহাম মে দিবস উপলক্ষে এক র্যালির আয়োজন করে সংগঠনটি। সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় হাজারের অধিক শ্রমিক।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, পহেলা মে মহান মে দিবস; শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের আত্মত্যাগের বিনিময়ে শ্রমজীবী মানুষের জন্য ৮ ঘণ্টা শ্রম, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘন্টা বিনোদনের অধিকার আদায় হয়েছে। সারাবিশ্বের পাশাপাশি চামড়া শিল্প নগরীর শ্রমিকরাও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালন করছে।
শ্রমিক নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মে দিবসের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ১লা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করলেও দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বৃহত্তর অংশ আজও মে দিবসের ছুটি থেকে বঞ্চিত। দেড়শত বছর পূর্বে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘন্টা নির্ধারিত হলেও আমাদের দেশে ট্যানারি শিল্পে এই নিয়মের শতভাগ বাস্তবায়ন নেই। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদেরকে কাজ করতে হয়। আজও অনেক শ্রমিক উপযুক্ত মজুরি ও ওভারটাইম সুবিধা ব্যতীত দৈনিক ১২ ঘণ্টা কিংবা এর চেয়েও বেশি সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, শ্রম আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিংয়ের ঘাটতি রয়েছে। শ্রম আইন মোতাবেক শ্রমিক নিয়োগের সময় শ্রমিককে নিয়োগপত্র প্রদান করা হচ্ছে না; ট্যানারি কারখানাগুলোর কাজ স্থায়ী প্রকৃতির হলেও আইনে বর্ণিত সময়সীমার পর শ্রমিকদেরকে স্থায়ী করা হচ্ছে না, এছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে, ফলে শ্রমিকরা আইনাগত সুযোগ- সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ সময় তারা অভিযোগ করেন, আইএলও কনভেনশন ও শ্রম আইন মোতাবেক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থাকলেও স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের নানানভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকারের কথা তুলে ধরলে তাদের ওপর নেমে আসে নানারকম হয়রানি, যখন খুশি তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে।
চামড়া শিল্পের সকল মালিকদের প্রতি তারা কমপ্লায়েন্সের স্বার্থে, শিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে, দেশের আইনকানুন মেনে চলার আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে শ্রমিক নেতারা চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে মোট ১২ টি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো, বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য দ্রুত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন এবং নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি এবং সিবিএ চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন গ্রেডের জন্য যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত রয়েছে তার কম মজুরি দিয়ে কোনো শ্রমিক নিয়োগ না করা, ট্যানারি কারখানাগুলোতে শ্রম আইনের সকল ধারা বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, নিয়োগপত্র প্রদান ব্যতিরেকে কোনো শ্রমিক নিয়োগ না করা, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেইফটি কমিটি গঠন ও কার্যক্রম জোরদার এবং পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এছাড়া, চামড়া শিল্প নগরীতে অবিলম্বে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এবং শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা তৈরি করা, প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সিইটিপিকে পুরোপুরি কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি)-এর সনদ অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়া, অসৎ উদ্দেশ্যে শ্রমিক হয়রানি ও তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করা বন্ধ করা, অবিলম্বে মধ্যস্বত্বভোগী কন্ট্রাক্টর বা ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করানো বন্ধ করা, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা এবং আইন দ্বারা স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চায় প্রশাসনিক এখতিয়ারবহির্ভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, ট্যানারি শিল্পের জন্য গৃহীত 'ন্যাশনাল প্লান অব একশন' অর্থাৎ, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ট্যানারি শিল্পকে আনুষ্ঠানিক সেক্টরের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনা।
শ্রমিক নেতারা জানান, দেশের চামড়া শিল্পে বর্তমানে ৮ থেকে ৯ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
