নেতৃবৃন্দের নির্দেশে রাজধানী আ. লীগ নেতাকর্মীদের পাহাড়ায়

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের নামতে দেখা গেছে।
দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় টহলদারি ও মিছিলে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আজ শুক্রবারও তা অব্যাহত থাকবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১৯৭৫ সাল থেকে আমরা মার খাচ্ছি। আর মার খাওয়ার সময় নেই। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে।'
এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগী সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও মহল্লায় পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুই সিটির মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যৌথসভায় নেতা-কর্মীদের পহারায় থাকার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্র করে বিএনপি সারা দেশে ব্যাপক নাশকতার ছক একছে। এই ছক কোনোভাবেই বাস্তবায়নের সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। সে কারণেই দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে অবস্থান করবে। তবে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে, সেটি শুক্রবার চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, রাজধানীর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সর্ব্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য, যাতে করে কারো জানমালের ক্ষতি না হয়।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারে সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারেক রহমানকে এ দেশে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'বিআরটিসির বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে যে বাসে আগুন দিতে আসবে, তাঁকে ধরে আগে তাঁর হাত আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। বিএনপি-রাজাকারদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল। এখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে তারা মনে করছে। তবে এত সহজে এখন আর তা হবে না। আমরা জানি, কোথায় কী হবে। দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।'
গণমাধ্যমের মালিকদের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেকে আছে বিএনপিকে তেল মারছে। এত তেল মারা কিসের জন্য। কত তেল আছে, আমি তাদের দেখব।'
দলীয় নির্দেশনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান কচি টিবিএসকে বলেন, '১০ ডিসেম্বর বিএনপি রাজধানীকে অচল করার যে নীল-নকশা আঁকছে, তা কোনোভাবেই যাতে বাস্তবায়ন না হতে পারে সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কারো ওপর কোনো আক্রমণ করব না, যতক্ষণ না কেউ আমাদের ওপর আক্রমণ করবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, যেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে।'
এদিকে আটকের আগে আওয়ামী লীগের পাহারার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, 'বিএনপিকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ পাড়ায় মহল্লায় পাহাড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে স্পষ্ট হচ্ছে যে, তারা পুরোপুরি একটি সন্ত্রাসী দল। গণতন্ত্রের যে মূল কথা, বিরোধী দলের রাজনৈতিক সর্মসূচী পালনের স্বাধীনতা দেওয়া, যেটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, সেটিতে তারা বিশ্বাস করে না। তারা যে ভয় এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দেশ পরিচালনা করছে, সেটিও স্পষ্ট হয়ে গেল।'