১৩ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির নির্দেশ

আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা সাপেক্ষে আগামী ১৩ জুন থেকে এ বিভাগের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে বুধবার (২৬ মে) এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ১২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ১৩ই জুন হতে দেশের সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে শিক্ষামন্ত্রী জানান, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে ছয় দিন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন স্কুলে আসবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নেমে এসে ৫% এর নিম্নে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আবার চালু করার মত অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য, করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ৫% এর নিচে না আসা পর্যন্ত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আবার খুলে দিতে পারে না।
বরং দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে সংক্রমণ বাড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে লোকজন যেভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে তাতে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত আমাদের নতুন সংক্রমণ হারের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত"।
এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার কী হবে
চলতি বছরে এসএসএসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাসে আসতে হবে। সরকার একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে এবং এটি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
দীপু মনি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ার পর মন্ত্রণালয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, "পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে"।
২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্ত্রী জানান।
"২০২২ সালের পরীক্ষার্থীরা যথাক্রমে ১৫০ দিন ও ১৮০ দিন ক্লাস করে পরীক্ষায় অংশ নেবে। পরীক্ষার্থীদের একটি অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও প্রস্তুত করা হবে। জুন থেকে অ্যাসাইনমেন্টগুলো দেয়া হবে", বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার্থীদের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা
শিক্ষামন্ত্রী জানান, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার্থীরা তাদেরকে দেয়া এসাইনমেন্টগুলো অনুসরণ করছেন।
"মন্ত্রণালয় অবশ্যই পরীক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করবে। তবে পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ হলে পরীক্ষার্থীদেরকে তাদের এসাইনমেন্টের ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করা হবে"।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
পরবর্তী সময়ে একাধিকবার এই ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করলেও সেকেন্ড ওয়েভের সংক্রমণের ফলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবারও ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
গত বছরের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে, এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নিতে দুই বছর বা তিন বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয় এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো পরিকল্পনায় অন্তুর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তারা।